ম্যুভি রিভিউ- "দ্য স্পীড"

অনেকদিন পর বলাকায় গেলাম বাঙলা সিনেমা অনন্ত জলীল অভিনিত ম্যুভি "দ্য স্পীড" দেখতে। সিনেমা শুরুর আগে পর্দা সরে গেল সিনেমা হলের এবং স্বাভাবিক ভাবেই জাতীয় সংগীত মিউজিকে পরিবেশন । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম প্রায় ৩০% দর্শক সে সময় বসা থেকে উঠার নাম পর্যন্ত করেনি এই কয়েক মিনিট দাড়িয়ে জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শণ করতে। সিনেমার শুরুই হলো বেশ দারুন সাউন্ডের ইফেক্ট দিয়ে। "দ্য স্পীড" নামটিকে সার্থক করতেই হয়তো।

১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসের কোন একদিন

মানুষের জীবনে বোধ সঞ্চারের এক নির্ভেজাল উপাদানের নাম কবিতা। কবিতা কখনো মানুষের মনকে রাঙিয়ে দেয়, কখনো বদনার কালো রঙ ঢেলে উপলব্ধিগুলোকে সতেজ করে তোলে; জীবন দর্শনের পথকে করে প্রশস্ত।

নারী-পুরুষ নিয়ে একটি বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলি

'জেন্ডার' শব্দটি মুলত নারী ও পুরুষ উভয়কেই বোঝায়, বোঝায় নারী-পুরুষকে নিয়ে বৈষম্যহীণ সমাজের, রাষ্ট্রের কথা। সংস্কৃতি ও সমাজ নারী ও পুরুষ সম্পর্কে যে সব দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ গড়ে তোলে, ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করতে শেখায়, কিংবা ভুমিকা পালন করতে বলে, সেসবই হচ্ছে জেন্ডার।

সৌদি নারী...অতঃপর রোকেয়া

যদি আজ থেকে প্রায় একশ বছর পেছনে তাকাই বেগম রোকেয়ার (রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন১৮৮০-১৯৩২) জীবনে যিনি সৌদি নারীদের মতো প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাননি কিন্তু তার দেখানো আলোতে এখনও আমরা পথ দেখি।

নারী....আর কতোকাল রবে শুধুই অর্কিড হয়ে!

প্রচলিত ধ্যান-ধারণা হচ্ছে নারী হবে নরম-কোমল, সর্বংসহা (মাতা), মনোরঞ্জনকারিনী (বধূ)। তারা থাকবে অন্দরমহলে। আর তাই প্রবাদে শোনা যায়... 'ঝি নষ্ট হয় হাঁটে, বউ নষ্ট হয় ঘাটে'।....অর্থাৎ ঝি কে হাঁটে-বাজারে-মার্কেটে পাঠানো যাবে না আর বউকে পুকুর ঘাটে পাঠানো যাবে না (যদিও গ্রাম এলাকায় পরিবারের পানির যোগান দাতা সাধারণত নারীই)।

সোমবার, ২৮ মে, ২০১২

রুদ্ধ জানালার ফাঁক গলে আলো এসে পড়ুক ।।

প্রিয় ডেভিড। আপনার নতুন পোস্টের কথা পড়েতো ভড়কে গিয়েছিলাম। যাই হোক, আমি প্রায়ই হতোদ্যম অবস্থায় থাকি আবার সেখান থেকে নিজেকেই টেনে তুলি নিজের প্রয়োজনে। এক আরজু পনির ভেতর একেবারে বিপরীত দুটি সত্ত্বা কাজ করে। এক পনি চরম আবেগী, দূর্বল মানসিকতার আর পনির ভেতর আরেকটা অস্তিত্ব আছে যেটা যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সাহস রাখে। নিজেকে যে কোন চরম অবস্থা থেকে স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে যার জুরি নেই। এজন্যে জীবনে ভোগান্তীও কিছু কম হয়নি। গতকাল আমার ভার্চুয়াল জগতের সেই প্রিয় লিও-এর সঙ্গে কঠিন ঝগড়া করলাম বলা যায় এক তরফা। হয়তো নিজেকে দূরে সরাতে চাচ্ছিলাম বা নিজেকে একটা তিক্ত পরিস্থিতির সামনে দাড় করিয়ে নিজেকে বোঝাতে চাচ্ছিলাম "পনি, তোর এখানে থাকা ঠিক না" । আমি জীবনটাকে বিভিন্ন ভাবে দেখতে পছন্দ করি। একধরনের জীবন যাপন করা আমার পক্ষে কঠিন। তবে স্বামী, সংসার, সন্তান এগুলো একেবারে ভিন্ন প্রসঙ্গ। কারণ বেঁচে থাকতে যেমন মৌলিক চাহিদা মেটানোর প্রয়োজন হয়, আমার কাছে স্বামী, সংসার , সন্তান জীবনের মৌলিক চাহিদার মতোই। এগুলো ছাড়া যেমন জীবন অচল এরাও আমার জীবনে তেমনি। কিন্তু এর বাইরে একঘেয়ে জীবনে থাকাটা বড়ই কষ্টের। জীবনে যদি রঙের পসরা না থাকে তবে এই ক্ষুদ্র জীবনটা ক্ষুদ্র থেকেই শেষ হয়ে যাবে। আমি আমার জীবনটা অনেক দেরী করে শুরু করেছি। আর তাই এতোগুলো বছর পার করার পরও নিজেকে এখনও মানসিকভাবে কিশোরীই দেখি। সেই কিশোর বয়সের যেই স্বাভাবিক উচ্ছলতা থাকার কথা ছিলো, সেগুলো আমি এই বয়সে উপভোগ করি। এখানে হয়তো আবেগে আক্রান্ত হয়ে কখনও কখনও বাড়াবাড়ি করে ফেলি তবে তারপরও সেই বাড়াবাড়িটা নিজের বাস্তব জীবন পর্যন্ত হাজির করতে ইচ্ছুক নই। বাস্তবে আমি বড্ড রূঢ় একজন মানুষ। এখানে আমার কাছে কোন ছাড় নেই। যা ভালো লাগবে না, তা যদি অন্যায়, অযৌক্তিক মনে হয় তবে দেবী কালির মতোই আমি খড়গ হস্ত। আর এই স্বভাবের জন্যে আমি অনেকেরই বিরাগ ভাজন হয়ে যাই। আমার করার কিছুই নেই। এই ব্যাপারে আমি আপোষহীন। তবে অবশ্যই দেশের বিরোধী দল আর সরকারী দলের নেতা, নেত্রীদের মতো আপোষহীন হওয়ার আগ্রহ বা বাসনা আমার নেই। আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। অতি সাধারণ ভাবেই আমার জীবন চলে যাচ্ছে। শুধু মাঝে মাঝে জীবনকে রঙিন কাচের ভেতর থেকে আরো একবার, আরো একবার এবং আরো আরো বার দেখতে চাই। দেখতে চাই আমার প্রিয় দেবতাকে প্রিয় আসনটিতেই। আপনি লিখে যান আপনার মতো করেই। হিটের আকাঙ্খা থেকে নয় (জানি সে আকাংখা আপনার নেই), পরিচিত বা নাম কামানোর জন্যে নয় (আপনিতো নিরবেই লিখে যাচ্ছেন)। অনেক অনেক ভালো থাকুন। শুভ বিকেল।।

শনিবার, ২৬ মে, ২০১২

তুই তো বেডা হইয়া গেছস

আকাশে প্রচন্ড মেঘ করেছে। রওশন আরা তার কোমড়, উরুর প্রচন্ড ব্যাথা নিয়েও বিছানা থেকে নিজেকে টেনে নামালেন। উঠানের রোদে দেওয়া ধান গুলো এখনই না তুললে ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে গেলে এই ধান নিয়ে তাকে আবার বিপাকে পড়তে হবে। রুখশানা বাড়িতে থাকলে তবুও একটু সাহায্য করতে পারতো। মেয়েটা ক্লাসে সব পড়া পারে তারপরও কেন যে পরীক্ষায় আশানুরুপ ফলাফল করতে পারছে নাতা রওশন আরার মাথায়ই আসে না। অথচ এ ব্যাপারে রুখশানার কোন বিকার নেই। স্কুল থেকে ফিরে স্কুলের ড্রেস না খুলেই দরজা বন্ধ করে দেয় এক ঘুম। ডাক দিতে গেলে কান্না জড়িত কন্ঠেই খেকিয়ে উঠে। কি করবে?! যাওয়ার সময় বাবার সঙ্গে কখনো সখনো মোটর বাইকে করে স্কুলে গেলেও নিয়মিত যাওয়া আসায় ৩ মাইল করে ৬ মাইল পথ হেটেই পারি দিয়ে দেয়। কখনো পথে অচেনা যুবকদের ঈভ টিজিংতো আছেই। যদিও হেড মাস্টারের মেয়ে বলে সবাই একটু সমীহ করেই কথা বলে। কিন্তু অচেনা যুবকদের কেইবা জানাবে যে, উঠতি যৈবনা, রুপসী রুখশানা হেডমাস্টারের মেয়ে। গুনী রুখশানা মায়ের আগ্রহেই এর মধ্যে টেইলারিং-এর কাজটা শিখে নিয়েছে। ঘরের টুকটাক সেলাই আর ঘরে পড়ার পোষাকগুলো নিজেদের পা-মেশিনেই বানিয়ে ফেলে। বিভিন্ন শো-পিছ বানাতেও সে ওস্তাদীর পরিচয় দেয় আর সেই সাথে মায়ের ১০ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেও কাছের বন্ধু-প্রতিবেশি মহলে বেশ নাম কামিয়ে নিচ্ছে। রুখশানার খুব শখ বাবার মতো শিক্ষক হবে। কিন্তু শিক্ষক হতে গেলে তো তাকে স্কুলের শেষ পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতেই হবে। তবেই আশা করা যায় সামনের সময়গুলোকে ঠিক মতো কাজে লাগানোর। কিন্তু গোড়াতেই গলদ হয়ে গেলে আর এগুবে কি করে! রুখশানার বাবা তারেক সরকার এলাকার সবচেয়ে বড় বিদ্যালয় কদমতলী হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। যেহেতু চাকুরী জীবনে সুনাম আছে, টাকার জোর সাথে রাজনৈতিক সুবিধা পাবে আর এম.এড-এ প্রথম শ্রেণী আছে তাতে তার ভারপ্রাপ্ত পদটা স্থায়ী পদে শিগগীরই রুপান্তরিত হয়ে যাবে। কিন্তু যতো কিছুই হোক রওশন আরা কোনভাবেই নিজের দূর্দশাগ্রস্থ জীবনের ছায়া তার মেয়ের উপর দেখতে চায় না। শহরের স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ার সময় এক ঈদে কাজিনের সাথে রিক্সা করে ঘুরতে বেরিয়ে ছিলো। কপালে শনি ছিলো, নইলে পরিবারের স্বজনেরা কেন যে রওশন আরাকে ভুল বুঝে এসএসসি পরীক্ষার মাত্র ৩ মাস আগে গ্রামের এক ধনীর বি.এ পড়ুয়া দুলালের কাছে বিয়ে দিয়ে দেয় তার হিসেব রওশন আরা আজো মিলাতে পারে না। কাজিনের সাথে ঘুরতে যাওয়া আর পালিয়ে যাওয়া যে এক বিষয় না তা রওশন আরার স্বজনরা এতোগুলো বছর পরও বুঝতে চায় না।ফলাফল যা হবার তাই হলো। এসএসসিতে এক বিষয়ে ক্র্যাশ করলো।ফলে কমপ্লিমেন্টারী দিয়ে পার হলেও শহরের সরকারী কলেজে ভর্তি হতে না পেরে এক অখ্যাত কলেজে ভর্তি হলো এবং দূর্দশা যেন নিত্য সাথি হয়ে গেল রওশন আরার। এইচএসসি পাশ করলেও ফলাফল ভালো হলো না। আর তখন বাধ্য হয়ে শ্বশুরবাড়ী এলাকার কলেজে বি.এ ভর্তি হলো। সহপাঠী ফ্যাশনেবল জেরিনের সাথে সখ্যতা গড়ে না উঠলেও পরিচয় তখন থেকেই। এর মধ্যে এক বাচ্চা এবরশন করলেও রুখশানা পেটে চলে এলে বন্ধ হয়ে যায় রওশন আরার গ্র্যাজুয়েট হবার স্বপ্ন। অথচ এই শহুরে রওশন আরাই এক সময় শিশু একাডেমিতে চোখ ধাধানো সব ছবি আকঁতো। স্বপ্ন দেখতো ঢাকার আর্ট কলেজে পড়ার। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রওশন আরা উঠানে কয়েকভাগে মেলে রাখা ইরি, আটাশ আর তেইশ ধান গুলো তোলা শুরু করলো। পাইজম আর নাজিরশাইল পেতে পেত এই আটাশ আর তেইশ দিয়ে ঘরের মানুষগুলোর ভাতের চাহিদা মিটে যায়। শহুরে মা, বোন, ভাবীদেরও সে বস্তা ভরে ভাতের চাল আর পিঠার চাল পাঠায় নিজের খুশিতেই। প্রকৃতি যেন মুচকি হেসে ব্যঙ্গ করলো। সবগুলো ধান ভাগ ভাগ করে বারান্দায় তুলে গরু-বাছুর আনতে গেলে ততক্ষণে মেঘ সরে আবার আকাশ ঝকঝকে সূর্য যেন হাসি দিয়ে উপহাস করলো। পেছন পেছন সারে তিন বছরের আদরের ধন আরিফ। গরু-বাছুরের দড়ি গুলোকে আবার মাঠে খুঁটি গেড়ে উঠানে এলো ধান নাড়তে। শরীর আর চলছে না, টেনে টেনে আবার সব ধান মেলে দিয়ে বিছানায় নেতিয়ে পড়লো। ব্যস্ত হেডমাস্টার হেড মাস্টার তারেক সরকার এমন কোন রাত যায় না যেই রাতে সে তার স্ত্রীর কাছ থেকে তার জৈবিক চাহিদা পূরণ করে নেয়। নারীর প্রাকৃতিক নিয়মে সীমাবদ্ধ নিষিদ্ধ সময়গুলোতেও সে তার স্ত্রীকে বাধ্য করে ভিন্ন উপায়ে তার চাহিদা পূরণে। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর অনেক রাতেই রওশন আরার স্বামীর এসব জৈবিক চাহিদা মেটাতে যেয়ে স্বামীকে পাষন্ড মনে হয়। ইদানিং স্বামীর চাহিদা পূরণ করার পর রওশন আরা খেয়াল করছে তার সতীপথ দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। ব্যস্ত স্বামীকে যদি এই কথা বলে তবে "সারা বছরের রোগী" এই অপবাদ শুনতে হয়। স্বামী তারেক সরকার রাতে তার চাহিদা মেটানোর পর ইদানিং শুরু করেছে আরেক নাটক। সারারাত কার সঙ্গে যেন কথা বলে। লুকিয়ে একদিন মোবাইল চেক করে রওশন আরা হতবাক। তারই সহপাঠী সেই ফ্যাশনেবল জেরিন যে এখন অন্য একটি কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করছে। এই কয় বছরে জেরিনকে নিয়ে অনেক পুরুষকে জরিয়েই অনেক বাজে কথা কানে এসেছে। কিন্তু নিজের স্বামীর সংশ্লিষ্টতার কথা ভাবতেই শিউরে উঠে রওশন আরা। একদিন জিজ্ঞেস করায় নিজেকে ফেরেশতা প্রমাণ করতে স্বামীর কঠিন ধমকে মিইয়ে গিয়ে পরে আর কোন প্রশ্ন করার সাহস হয়নি রওশন আরার। কিন্তু লোকমুখে ফিসফিসানী একসময় রওশন আরার কানে আসে। স্বামীর চাহিদা বেড়ে গেছে। সে এখন ডিভোর্সড জেরিনের কাছে যায় তার বেড়ে যাওয়া চাহিদা পূরণ করতে। যদিও এক সময়ের স্বামীর বাগানের সুবাস ছড়ানো গোলাপ ফুল রওশন আরা কখনও ত্রুটি করেনি স্বামীর চাহিদা পূরণে কিন্তু এখন আর তার হিসেব মেলে না। রাগ করে যে বাপের বাড়ি চলে যাবে সে উপায়ও নেই। বাপের বাড়ির মানুষগুলো তাদের পুরনো ভুল এখনও বুঝে আছে। এর মধ্যে নিজেই একদিন মোড়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায়। ওরা চৌরাস্তার বড় ক্লিনিকে যেতে বলে। পরদিন স্বামীকে অনেক হাতে -পায়ে ধরে বড় ক্লিনিকে যায়। ভায়া (VIA) টেস্ট করতে বলে ডাক্তার। পরীক্ষা করে ফলাফল আসে রওশন আরা জরায়ু মুখের ক্যান্সারে কঠিন ভাবে আক্রান্ত। ডা. লতিফ তারেক সরকারকে জিজ্ঞেস করে জেরিনের সুস্থ্যতার কথা। রওশন আরা কিছু বুঝতে না পেরে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে স্বামীর দিকে। বহুগামী জেরিনের যে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে একথা তারেক সরকার চেপে যেতে চেয়েও পারে নি। এর মধ্যে গ্রামের মহিলাদের কাছে প্রচার হয়ে গেছে রওশন আরার জরায়ু কেটে ফেলতে হবে। জেরিনের কাছ থেকে জৈবিক চাহিদা মেটাতে গিয়ে এই রোগের জীবানু তারেক সরকার স্ত্রীতে স্থানান্তরিত করে দিয়েছে। VIA টেস্টের রেজাল্ট জানার পর তারেক সরকার যেন আরও হিংস্র হয়ে উঠে। যখন তখন হাত উঠে রওশন আরার গায়ে। কখনো কখনো লাথি দিয়েও ফেলে দেয় এই বলে যে, সে কোন বেটা ছেলের সাথে এক বিছানায় ঘুমাবে না। গভীর রাত, বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। ফোনে আলাপরত তারেক সরকারের এমনি এক লাথ্থিতে নিচে পড়ে যেয়ে রওশন আরা ঘরের বাইরে বেরিয়ে আসে। আকাশের জলও যেন হার মানছে তার চোখের জলের কাছে। শুধু কানে ঝমঝম করে বৃষ্টির শব্দকে ছাপিয়ে তার কানে বাজছে স্বামীর কথাটা " তুইতো বেডা হইয়া গেছস" শব্দের অর্থ: আর্ট কলেজ=চারুকলা VIA= Visual Inspection of Cervix with Acetic Acid

গণমাধ্যম ও নারী - সিনেমা পর্ব

সিনেমার নাম "অভিমান", নায়িকা টিভির সফল নিউজ প্রেজেন্টার। সেটেল ম্যারেজে বিশ্বাসী নায়িকা অপেক্ষা করছিলো পারিবারিকভাবে দেখাশুনা হওয়ার মাধ্যমে বিয়ে হোক। তাই হলো। শ্বশুর বাড়ির মানুষতো মহা খুশি এমন গুণবতী, সেলিব্রিটি বউ পেয়ে। বৌ-ভাতের পরদিনই নায়িকার লাইভ শো থাকায় তার বাসর রাতেও স্বামীকে বাড়তি কোন রোমান্টিক সিনে মজে থাকতে দেখা না যাওয়ায় সত্যি মারাত্নক অবাক হয়েছিলাম! কারণ এমনটা তো স্বাভাবিক না! দরজা বন্ধ হবে তারপরই শুরু হবে লিলা খেলা। যাইহোক পরদিন সকালে বউ মন্ত্রীর লাইভ সাক্ষাতকার নিবেন সুতরাং তাকে যেতে হবে টিভি সেন্টারে, শ্বাশুড়ী এমন আদর যত্ন করছিলো যে সত্যিই আমি জেলাস ছিলাম। দীর্ঘশ্বাস আটকে রেখে অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছিলো পরের কাহিনীর জন্য, কেননা পরের থ্রিল, এ্যাকশান যে খুব শিগগীর শুরু হবে! নায়িকা মানে নতুন সেলিব্রেটি বউকে তার স্বামী নিজে গাড়ী (সম্ভবত হ্যারিয়ার হবে) চালিয়ে দিয়ে আসেন। এবং কথা থাকে যে বউ অফিসের পরে বাইরে আরেক জায়গায় যাবেন (কেন, কি কারণে, ঠিক কোথায় যাবে এটা জানতে না পেরে বিরক্তই ছিলাম!) সেখান থেকে তার স্বামী তাকে নিয়ে যাবেন। সময়টা ছিলো বিশিষ্ট নারীবাদী একজন লেখিকার অন্যদেশে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে দিনের পর দিন থাকা নিয়ে সে দেশে সৃষ্টি রাজনৈতিক নৈরাজ্য নিয়ে। এবং দাঙ্গায় সেখানে একপর্যায়ে সরকার কার্ফু চালু করতে বাধ্য হয়। এ অবস্থায় বউটি সেই দাঙ্গায় আটকে যায়। এবং ঘটনাক্রমে এক মহান ছিনতাইকারীর ক্ষপ্পরে পরে তার আস্তানায় রাত কাটাতে বাধ্য হয়। পরদিন বউ যখন তার সেই মহান রক্ষাকত্যা ছিনতাইকারীকে সাথে নিয়ে শ্বশুরবাড়ীর সবার সাথে পরিচয় করাতে যান তখনই ঘটে আসল বিপত্তি। আমি কারো সাথে রাত তিনটার সময় দেখা করতে গেলে আপনারা্ও নির্ঘাত বলবেন যে, আরজু পনির চরিত্র খারাপ তাই না?! ঘটনা ভয়ানক আকার ধারণ করলে বউ ব্লেড দিয়ে তার হাতের শিরা কেটে আত্নহত্যার চেষ্টা করলেও মহানুভব ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে সক্ষম হন। এবং ততক্ষণে স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ীর মানুষ বউয়ের লেখা চিঠি পড়ে নিজেদের ভুল বুঝতে পারলেও সেই আভিমানী বউ আর ফিরে আসে নি।
সাধারণত আমাদের দেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের বেশিরভাগ দর্শক হলেন নিম্নবিত্ত শ্রেণীর খেটে খাওয়া মানুষ। কিন্তু এসব চলচ্চিত্রে নারীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়, তাতে মনে হয় একজন কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর একমাত্র কাজ হচ্ছে প্রেমে পড়া । তাকে লেখাপড়া করতে হয় না, লাইব্রেরী ওয়ার্ক করতে হয় না, এমনকি পরীক্ষা নিয়েও দুশ্চিন্তা করতে হয় না। এখানে নারীর ভুমিকা হলো নায়কের চারপাশে নাচগান করা, অসহায় হয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া, নির্যাতিত হওয়া (সিনেমার নাম মনে নেই আলেকজান্ডার বো আর মুনমুন মুল চরিত্রে, যেখানে মযুরীরর কাজই ছিলো রেপ হওয়া), নায়ক বা কোন পুরুষের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি। সাধারণত মূল ঘটনায় নিয়ন্ত্রকের ভুমিকায় নারীকে দেখা যায় না। একসময়ের সেনেমার পদা কাঁপানো নারীকুল শিরোমনি শ্রদ্ধেয় "শাবানা"-র কাজই ছিলো স্বামী, শ্বাশুরী, ননদদের হাতে নির্যাতিত হয়ে অবহেলিত লাঞ্ছিত জীবন যাপন করতে। স্বামী মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাসায় ফিরলেও শাবানা ম্যাডাম সেই মাতাল স্বামীর ঘাম মুছে "ওগো" "হ্যাঁগো" বলে স্বামীর পায়ের জুতা খুলে দিতে। একটা গান মনে পড়ে গেল এক্ষেত্রে এদেশের মূলধারার চলচ্চিত্রে নারী মূখ্য নয়, গৌণ মাত্র। অথচ চলচ্চিত্রের মতো একটি শক্তিশালী গণমাধ্যম নারীর ইতিবাচক ইমেজ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারে। আর তাই এদেশের যে সব নারী কর্মক্ষেত্রে , সংসারে সর্বত্র সামাজিক অর্থিনৈতিক- সাংস্কৃতিক অবদান রেখে চলছেন - তাদের জীবন সংগ্রাম , সাফল্য ও বঞ্চনার চিত্রায়ণ হওয়া প্রয়োজন চলচ্চেত্রের মতো একটি শক্তিশালী গণমাধ্যমে, সমাজ জীবনে যার প্রভাব খুব বেশি।

গণমাধ্যম ও নারী- ভুমিকা/ বিজ্ঞাপন পর্ব

আমাদের চিন্তাধারা ও মননের গঠন ও বিবর্তনে সহায়ক যেসব শক্তি বিশ্বে বিদ্যমান তার অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হলো গণমাধ্যম। সঙ্গতকারণে গণমাধ্যম কর্মীরাই বাংলাদেশে জেন্ডার সংবেদী সংস্কৃতি গড়ে তোলায় গণমাধ্যমের ভূমিকাকে আরও বেগবান করে তুলতেপারেন। সমাজের যে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমরা সামাজিক রীতি-নীতি ও আচার-আচরণ শিখে থাকি, তার মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী হলো গণমাধ্যম। বহুধা বিস্তারের ফলে গণমাধ্যম এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ। জীবন-যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও শিক্ষার সিংহ ভাগই এখন মানুষ গণমাধ্যম থেকে পায়। নারী-পুরুষের বৈষম্যের প্রশ্নেও বলা যায় যে, গণমাধ্যম নানাভাবে এই বৈষম্যকে টিকিয়ে রাখতে পারে। আবার একইভাবে গণমাধ্যমের মধ্য দিয়েই একটি সমতামূলক সমাজগঠন বার্তার প্রসার ঘটতে পারে। আর তাই সমাজে রাষ্ট্রে তথা অন্তর্জাতিক অঙ্গণে নারী ও পুরুষের ভারসাম্যময় উপস্থিতির জন্য গণমাধ্যমে নারীর ইতিবাচক প্রতিচ্ছবি অত্যন্ত জরুরী। প্রায় সব ধরনের মিডিয়া বা গণমাধ্যমে প্রবেশের সুযোগ এদেশের মানুষের রয়েছে। এসব গণমাধ্যমের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। যেমন- • শ্রবণ সম্বন্ধীয়- রেডিও, ক্যাসেটস, সিডি, সেলুলার ফোন ইত্যাদি • শ্রবণ-দর্শণ সম্বন্ধীয়- ছায়াছবি/চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, ভিডিও, মঞ্চ, নাটক, ইন্টারনেট ইত্যাদি • দর্শণ সম্বন্ধীয়- ছবি, পোস্টার, কার্টুন, শিল্পকলা, পেইন্টিং ইত্যাদি • মুদ্রণ শিল্প- সংবাদপত্র, বই, ম্যাগাজিন লিফলেট ইত্যাদি গণমাধ্যমে নারীর বর্তমান চিত্র জানতে এখানে রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, পোস্টার, সংবাদপত্র এবং বিকল্প মাধ্যম অর্থাৎ ফেসবুক, ব্লগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেয়া হবে। [sb]ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে নারী:[/sb]
আজকে বিজ্ঞাপনে নারীর উপস্থিতি নিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করবো- নব্বইয়ের দশকে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে যে সব বিজ্ঞাপন প্রচার করা হতো বর্তমানে তা আরও আকর্ষণীয়, জৌলুসপূর্ণ ভাবে প্রচারিত হয়ে থাকে, বদলে গেছে উপস্থাপনের ধরণ। তবে তারপরও বিজ্ঞাপনে নারীর প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখা যায় তা সাধারণত নেতিবাচক। একটি বিজ্ঞাপনে দেখা যায় দেখা যায়বিশেষ একটি ব্র্যান্ডের টিভি স্বামীর (!) বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিয়ের অনুষ্ঠানেই জেদ ধরে মেয়েটি। এধরনের বিজ্ঞাপন যৌতুকের মতো ঘৃণ্য প্রথাকে প্রকারান্তরে সমর্থন করে। আবার মুখের ক্রিমের বিজ্ঞাপন গুলোতে দেখানো হচ্ছে মেয়ে কালো বলে বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে, আর সেই নির্দিষ্ট ক্রিম মাখার কারণে রং ফর্সা হওয়াতে নতুন উদ্যমে বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে এখানে মেয়ের গুণ নয় বরং রূপকেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের খ্যাত অভিনেত্রী সূবর্ণা মুস্তফা, রোকেয়া প্রাচী, ভারতের কাজল, বিপাশা বসু, হলিউডের হ্যলবেরি বা জেনিফার লোপেজের গায়ের রং তাদের পথ চলার ক্ষেত্রে কোন বাধা হতে পারেনি।আর এসব বিজ্ঞাপন প্রকারান্তরে বর্ণবাদকেই উসকে দেয়। যত মসলার বিজ্ঞাপন আছে তার সবটা জুড়ে থাকে নারী, যেখানে সুবিধাভোগী হিসেবে পুরুষকে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এমনও দেখা যায় স্বামী –স্ত্রী উভয়েই সারাদিন অফিস করে এসে স্ত্রী ঢুকলেন রান্না ঘরে আর স্বামী সংবাদপত্র পড়ে, টিভি দেখে সময় পার করছেন এবং টেবিলে এসে রান্না মুখরোচক কম হওয়াতে স্ত্রীকে বকাবকি করছেন। এবং সেই মসলায় রান্নার মুখরোচক হওয়া খাবারে সংসারে শান্তি ফিরে আসে। বস্তুত যারা বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেন এবং করান তাদের কেউ কেউ মনে করে থাকেন বিজ্ঞাপনে নারীকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় তা সমাজেরই প্রতিচ্ছবি। কিন্তু পণ্যের উৎপাদক ও বিক্রেতা নারীর ইতিবাচক ভূমিকাকে বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন মাত্রায় দেখানো হলে একদিকে পণ্যের প্রচার ও হয় আর অন্যদিকে নারীর ইতিবাচক ভাবমূর্তিও প্রতিষ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রে একটি চায়ের বিজ্ঞাপনে নারীকে হারিয়ে যেতে না দিয়ে বরং নিজের গুণাবলির প্রকাশ ঘটাতে বলা হচ্ছে। অন্য একটি ফলের জুসের বিজ্ঞাপনের নারীর নির্দিষ্ট একটি ফল নিয়ে ভবিষ্যত ভাবনার উপস্থাপন এবং বার্ধক্যে তার সেই ভাবনার বাস্তবরূপ দেখানো অন্য বিজ্ঞাপনের তুলনায় এধরনের বিজ্ঞাপনের প্রচারে প্রসার কোন অংশে কম নয় বরং বেশিই হতে পারে। উৎসর্গ: নারীর ইতিবাচক উপস্থাপনে নিবেদিত গণমাধ্যমের কর্মীদের সম্মানে।।

সোমবার, ২১ মে, ২০১২

বিশ্বাসঘাতক!



গত ফেব্রুয়ারী মাসে বড় আপার শ্বশুরবাড়ী গিয়েছিলাম, পঞ্চগড়ের বোদায়।এটা বড় আপার প্রথম শ্বশুরবাড়ী ভ্রমণ, তাই আমাকেও সাথে নিল।বড় আপা খুব এক্সাইটেড ছিলো প্রথম শ্বশুর বাড়ী ভ্রমণে।

তারপরের কথাগুলো বড় আপা যা বলেছে তা হুবহু তুলে দিলাম

...শ্বশুরবাড়ীতে ওয়েলকাম কিভাবে জানাবে তা নিয়ে একটু অসস্তিতে ছিলাম। যখন বাড়ির কাছে পৌঁছলাম তখন সবই বেশ হাসি মুখে রিসিভ করতে এলো। প্রথম দফাতেই ভালো লেগে গেল। ভেতর বাড়িতে ঢুকতে বইরেএকটা পুকুর ঘাট, বাঁশঝাড়, কবরস্থানএসব পাড় হয়ে তার পর ভেতর বাড়িতে যেতে হয় কিন্তু যখন পুকুরপার দিয়ে যাচ্ছিলাম তখন কেমন যেন শীত শীত করছিলোএকটু বেশিই! পাত্তা দেইনি ব্যাপারটায়। ভেতর বাড়িতে যাওয়ার পর কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে, নাস্তা সারার পর মুরুব্বীরা শ্বশুরের কবর জিয়ারত করতে নিয়ে গেলেনযা কি না বাশ ঝাড়ের পাশেই, আর তার একটু অদূরেই সেই শীত লাগা পুকুর টা! কবর জিয়ারত করে মনটা খুব খারাপ লাগছিলো, বাসার ভেতরে যাওয়ার জন্য যখন অন্যদের তাড়া খাচ্ছিলাম তখন আমার খুব ইচ্ছে করছিলো পুকুর পাড়টাতে বসতে।
পারলাম না অন্যদের তাড়া খেয়ে। কিন্তু মনটা পড়ে রইলো পুকুর ঘাটে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে আর আমি টের পাচ্ছি আমার ভেতর কেমন যেন অস্থিরতা পেয়ে বসছে! পুকুরটা বড্ড টানছে আমায়।একবার যেতে নিলাম, বাশঝাড় পাড় ওয়ার সময় কেমন যেন শিরশির লাগছিলো। পুকুর ঘাটে যেয়ে বসলাম, মনে হলো যেন ইয়ের সাথে বসেছি গল্প করতে। বর হন্তদন্ত হয়ে খুজে আমায় ভেতরে নিয়ে গেল। খাওয়া দাওয়া শেষে কিছুক্ষণ গল্প হলো শ্বশুর বাড়ির পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে। কিছুক্ষণ টিভিও দেখা হলো।এরপর সবই যার যার মতো ঘুমাতে চলে গেল। আমি বরের পাশে শুয়ে আছি, খুব রোমান্টিক সময় কাটার কথা। কিন্তু আমি কোনভাবেই মনযোগ দিতে পাচ্ছি না। বরকে বললাম , "চল পুকুর ঘাটে যেয়ে বসি", বর কিছুটা বোঝানোর সুরে বললো এই মুহুর্তে যাওয়াটা বেমানান দেখায়। কিন্তু আমি ততক্ষণে ভেতরে একধরণের অস্থিরতা বোধ করছি। বর ঘুমিয়ে পড়েছে ভেবে বিছানা থেকে উঠে আসতে নিলাম, কিন্তু ঘুমের মধ্যেই সে আমার হাত টেনে ধরলো! এরপর বেশ কিছুক্ষণ মরার মতো পড়ে রইলাম। বর ঘুমিয়েছে নিশ্চিত হয়ে বিছানা থেকে নেমে পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরুলাম, আকাশে চাদের ম্লান আলো কেমন যেন এক বিষন্ন পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। ঘরগুলো পার হয়ে এবার বাশঝাড়,এদিক সেদিক তাকিয়েএগিয়ে যাচ্ছি। কেমন যেন শিহরণ লাগছে, হঠাৎ করেই দূরে দেখলাম সাদা শিফনের মতো শাড়ী গায়ে, পিঠ ছাপিয়ে চুল ঘোমটার ভিতর দিয়েও দেখা যাচ্ছে। আমি অবাক হলাম!এতো ছিপছিপে গড়নের সাদা শিফনের শাড়ী গায়ে রমনী আমাকে অদ্ভুত ভাবে তার পেছনে টানছে। আমি তাকে অনুসরণ করতে শুরু করলাম। আশ্চর্য! সে এতো রাতে পুকুরে নামছে কেন??!একসময় কান্নার শব্দে শরীররটা পানিতে ডুব মারলো! ততক্ষণে আমি ঘাটের কাছে চলে এসেছি। পেছন থেকে কেউ আমায় হ্যাচকা টান মারলো। বর!!!! তাকেতো ঘুমের মধ্যে রেখে এসেছি! সেই! পাশে না দেখে খুজতে বেরিয়েছে।
ঘরে গেলাম, আমার ঘাম ছুটছে, আবার প্রচন্ড শীত করছে। কেমন যেন অসহায় লাগছিলো। তোর কথা মনে পড়ে গেল। ডুকরে কেঁদে উঠলাম। বর মুখ চাপা দিয়ে বললো, কি করো? সবাই কি ভাববে?! আমি ভোরের অপেক্ষা করতে করতে রাত পার হয়ে গেল।
তখনও তুই ঘুমাচ্ছিস। আমি প্রথমে বড় জা কে বললাম গতরাতের ঘটনা!উনি চোখ বড় করে আঁতকে উঠাটাকে লুকাতে চাইলেন। গেলাম আরও তিন/চারজনের কাছে। সবাই কেমন যেন আঁতকে উঠে ঢোক গিলে।বুঝতে পাচ্ছি কিছুএকটা ব্যাপার আছে। কিন্তু কেউ মুখ না খুললে বুঝবো কেমন করে। গেলাম বড় জেইয়ার কাছে। বেশ দূর্বল হয়ে গেছেন, ফজরের নামায শেষ করে যায়নামাযে বসে তসবী জপছিলেন। ওকা মতো পেয়ে পাশে যেয়ে সালাম করে বসলাম।উনি স্নিগ্ধ হাসিটা ছড়িয়ে দিলেন। যখন গতরাতের ঘটনা উনাকে জিজ্ঞেস করে কেঁদে ফেললাম, উনি বিব্রত হয়ে গেলেন। বললেন, "বৌমা, তোমার কি এটা না জানলেই না?" আমি কাঁদো কাঁদো হয়ে বললাম, "জেইয়া, পুকুর তো আমাকে টানছে!" এই কথা শুনে উনার মুখটা আমসি হয়ে গেল। আমি উনার বিবর্ণ মুখটা দেখতে পেলাম ...বললেন

"একযুগ পরে বৌ যে কেন তোমাকেই দেখা দিলো সেটাইতো অবাক লাগছে!"

আমি ধাক্কা খেলাম "বৌ?!"

উনি বললেন, এই বাসায় গত ১২ বছরে আরো ৪ জন বৌ এসেছে, কিন্তু দীপালি বৌমাতো তাদের কাউকেই দেখা দেয়নি!!!!


নিঃস্ব পৃথিবীঃ
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পর আপুর কাছে যেয়ে দেখি আপু ঘুমাচ্ছে, ঠিক ঘুমাচ্ছে বলা যাবে না, চোখ বুজে পড়ে আছে। আপুর বড় জাআপুর কপালে পানি পট্টি দিচ্ছে। কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বরে পুরে যাচ্ছে আপুর শরীর, চোখের কোনা দিয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে জল। ওই ভাবী আমাকে দেখে আপুর কাছে থাকতে বলে কাজে গেলেন। আমাকে দেখে আপু শক্ত করে আমার হাতটা ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেললো। কাঁদতে কাঁদতেই বললো ঐশী, ভালোবেসে কাওকে কোনদিন বিশ্বাস করিসনা। তাহলে যতোদিন বেঁচে থাকবি ততোদিন জ্বলে পুরে মরবি। আমি ভাবছিলাম আপু হয়তো জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকছে। কিন্তু তখনও বুঝিনি কি ঘটতে চলছে। রাতে এককোনায় আমি, মাঝখানে আপু আর আরেকপাশে আপুর বরের শোবার ব্যবস্থা হলো। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা, কিন্তু হঠাৎ চাপা হিসহিস শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। আপু দুলাভাইয়ের সাথে চাপা গলায় ঝগড়া করছে। সারমর্ম যা বুঝলাম, দুলাভাইয়ের অফিসের "নাদিয়া" নামের কোন নারী কলিগকে নিয়ে কোন একটা সমস্যা। ঠিক বুঝতে পাচ্ছিলাম না, আপুর সন্দেহ নাকি আসলেই দুলাভাইয়ের কোন সমস্যা আছে। মাথাটা চিনচিন করে উঠলো। তবুও নিরবে পড়ে রইলাম এবং আবার কখন যে মরার ঘুমে ঘুমিয়ে পরেছিলাম, ঘুম ভাঙলো ঘরের বাইরে চিৎকার চেঁচামেচিতে! ভেতরটা ছেৎ করে উঠলো, পাশে আপু দুলাভাই কেউ নেই। কিন্তু সকাল হতে ঢের দেরী আছে। হুরমুর করে বেরুলাম। সবাই এই শেষ রাতে পুকুর পারে! আমার মাথা কাজ করছে না। আপু আমাকে গতকালই বলেছিলো ওই পুকুরের ঘটনাটা!
এই মুহুর্তে পরের অংশটুকু লিখতে আমার ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে। চোখের পানি সামলেও রাখতে পাচ্ছিনা। আমি এতো বড় কষ্ট নিয়ে পঞ্চগড় থেকে এতোটা পথ পারি দিয়ে কি করে ঢাকা ফিরে যাবো?! যেই আপু আমাকে নিয়ে এসেছিলো সেই আপুর সাথে ফিরে যেতে পারলাম না। আমার পৃথিবীটা নিঃস্ব হয়ে গেছে। এতো দ্রুত একা হয়ে যাবো ভাবতেও পারিনি। আপু, কেন আমায় বললিনা তোর সব কষ্টের কথা?! আমি কি পারতাম না কোনভাবে তোর কষ্ট দূর করতে? অন্তত আমায় চেষ্টাতো করতে দিতি? কেন এভাবে চলে গেলি?!


ঢাকায় ফেরার পর বাবা-মা দুলাভাইয়ের নামে কেস করতে চাইলেন, কিন্তু আপু নিজে যেখানে নিজেকে আত্নাহুতি দিয়েছে সেখানে আত্নীয়-স্বজনরা বাবাকে নিরুৎসাহিত করলো এই বলে যে এটাতো মার্ডার না।


শরীর সর্বস্ব:

ঢাকায় ফিরে দীপালী ভাবীর বাবার বাসা খুঁজে পেতে একটু কষ্টসাধ্যই হয়ে গেল। কারণ আপুর শ্বশুর বাড়ীর কেউ নাম্বার দিতে চায় না। শেষে আপুর সেই বড় জেঠা শ্বশুরকে ফোন করে কান্নাকাটি করে নম্বর যোগার করলাম।
১২ বছর আগের কাহিনী, কিন্তু দিপালী ভাবীর বাসায় যেয়ে তা বোঝার উপায় নেই। অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে থাকতে ভাবীর বিয়ে হয়েছিল, তখনকার উচ্ছলতায় ভরা ফটো ঘরময় টাঙানো। ভাবীর মারা যাওয়ার কোন তথ্য উনাদের বাসার কেউ দিতে পারেনি। তবে শ্বশুর বাড়ী থেকে বলা হয়েছিল সাঁতার না জানার কারণে পুকুরে নেমে আর উঠতে পারেনি।

দিপালী ভাবীর স্বামী আপুর মেঝো ভাসুর। খুঁজে বনশ্রী তার বাসায় গেলাম। যখন সেখানে যেয়ে পৌঁছলাম, তখন সেই নওরোজদার বাসায় উনার সাথে উনার সুদর্শন এক বন্ধু গল্প করছিলেন। আমাকে দেখে চুপ মেরে হাসিমুখে তাকালেন। তাদের চেহারা দেখে বয়স বুঝতে না পারলেও হিসেব করে দেখলাম প্রায় ৪২/৪৩ হবে। কিন্তু অবাক লাগছিলো তাদের আকর্ষণীয় ফিগার আর জ্বলজ্বলে চেহারা দেখে। এই বয়সেও এতো আকর্ষণীয় সত্যিই ঈর্ষণীয়!

কয়েকদিন তাদের দুজনের কাছ থেকেই সময় পেতে যেয়ে অবাক হয়ে খেয়াল করছিলাম নওরোজদার বন্ধু অর্থাৎ তমাল ভাইয়ের সাথেই আমার ভাব হয়ে যাচ্ছে! এবং উনি একসময় কথাচ্ছলে আমার সাথে অদ্ভুত সব ঘটনা শেয়ার করা শুরু করেছেন। আমিও কেমন যেন মোহগ্রস্থের মতো উনার কথাগুলোর একনিষ্ঠ শ্রোতা হয়ে গেলাম।

তমাল ভাই আমার কাছে একেক করে সব স্বীকার করেছেন। নওরোজদার একের পর এক মেয়েদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার পেছনে, ঢাকা শহরের ব্রোথেলগুলোর খোঁজ পেতে তমাল ভাইয়ের সংশ্লিষ্টতা। তারা অফিসিয়াল ট্যুরগুলোকে কতো নিঁখুত ভাবে কাজে লাগাতেন তাদের প্রতিটা দিনের শেষে রাতকে। সেখানকার মেয়েদের শরীর দিয়ে তাদের ক্লায়ান্টদের যত্ন করার বর্ণনা শুনে সত্যিই নিজেকে সামলানো কষ্টকর হয়ে গিয়েছিলো। ট্যুর শেষে ফিরে এসে তাদের খাবারের চাহিদা বেড়ে যেত। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার নাম করে মেয়ে গুলো নওরোজদাএবং তাদের মতো কাস্টমারদের শরীরের চাহিদা ভালোই মেটাতো।
দিপালী ভাবী কোনভাবে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন। যদিও নওরোজদার ব্যক্তিত্বের সামনে যে কারো দাড়ানোই মুশকিল। ভাবী ঢাকা কিছু প্রমাণ করতে পারেন নি।কিন্তু যখন শ্বশুরবাড়ী গেলেন তখন সেখানকার এক কুমারী মাতার কাহিনী দূর্ঘটনাক্রমেই জেনে গেলেন। যেই জাকিয়ার সন্তান কিনা নওরোজদার ঔরষজাত। চাপা একটা কষ্ট নিয়ে শ্বশুরবাড়ী যেয়ে এই ঘটনা জানার পর নিজেকে আর সামলাতে পারেননি। ঢাকায় ফিরে বাবা-মাকে হয়তো এই কষ্টের ভাগীদার করতে চাননি। তাই নিজেকে সেই পুকুরের পানিতেই তলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার আগে জেঠা মশাইকে বলে গিয়েছিলেন যেন ভাবীর বাবা-মাকে নওরোজদার চরিত্রের ব্যাপারে কিছু জানতে না দেয়।

লেখকের মতামতঃ
সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে মানুষ যদি শরীর
 সর্বস্ব হয়ে যায়, তবে তার মানুষ না হয়ে পশু হয়ে পৃথিবীতে আসা উচিত। 

রবিবার, ২০ মে, ২০১২

আমার প্রথম ম্যুভি রিভিউ- "দ্য স্পীড"


অনেকদিন পর বলাকায় গেলাম বাঙলা সিনেমা অনন্ত জলীল অভিনিত ম্যুভি "দ্য স্পীড" দেখতে। সিনেমা শুরুর আগে পর্দা সরে গেল সিনেমা হলের এবং স্বাভাবিক ভাবেই জাতীয় সংগীত মিউজিকে পরিবেশন । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম প্রায় ৩০% দর্শক সে সময় বসা থেকে উঠার নাম পর্যন্ত করেনি এই কয়েক মিনিট দাড়িয়ে জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শণ করতে।
সিনেমার শুরুই হলো বেশ দারুন সাউন্ডের ইফেক্ট দিয়ে। "দ্য স্পীড" নামটিকে সার্থক করতেই হয়তো।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অনন্ত একজন সৎ দেশপ্রেমিক CIP ।সিনেমার শুরুতেই দেখা গেল বেশ ব্যায়াম করছেন। একজন নায়ক হিসেবে দর্শকদের কাছে যা বেশ আকর্ষণীয় বটে। অনন্ত জলীলকে নিয়ে অনেক মজার মজার কথা এর আগে শুনেছি। শুনে অভিজ্ঞতা তেমন ভালো ছিলো না। কিন্তু অনন্তর এপ্রোচ দেখে বেশ আশার আলো দেখতে পেলাম।
ছোটবেলাতেই বাবা-মা মারা যাওয়ায় বড় ভাইয়ের কাছে বড় হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের গুলিতে ভাই-ভাবী নিহত হলে বড় ভাইয়ের ব্যবসার দায়িত্ব নিয়ে অনন্ত তার সততায় সেটাকে AJI Park (অনন্ত জলিল ইন্ডাস্টিয়াল পার্ক) বানাতে সক্ষম হন।
এদিকে দূর্নীতিবাজ কিবরিয়া (আলমগীর) তার ব্যবসায় লস খেতে শুরু করেন অনন্তর সৎ ব্যবসার জন্যে। ফলে সন্ত্রাসী দিয়ে অনন্তর উপর হামলা হয়। অনন্তর সিকিউরিটি সিস্টেম ভেঙ্গে গেলেও শেষে অনন্ত নিজেই অস্ত্র হাতে তুলে ঘায়েল করে ফেলেন সব শত্রুদের এবং কিবরিয়াকে বাসায় যেয়ে বলে আসেন " নীতিবানরা দূর্নীতিবাজদের চ্যালেঞ্জ করে না, থ্রেট দেয়" এদিকে বিদেশী এন্ড্রু তার ব্যবসায় সমুহ ক্ষতি হয়ে যাবার ভয়ে কিবরিয়াকে সামলাতে না পেরে অনন্তর কাছে গেলে অনন্ত তার মুখোশ খুলে দেন। দেশী খেলোয়াররা যে বিদেশে যেয়ে আর দেশে ফিরে আসে না তাদেরই একজন এনায়েতুল্লাহ এখন বদলে নিজেকে বানিয়েছে এন্ড্রু তা অনন্ত এ্যান্ড্রুর মুখের উপর বলে দেয়্।

এদিকে বড় ভাইয়ের রেখে যাওয়া একমাত্র কন্যা দৃষ্টি (দীঘি)র সেবায় সারাক্ষণ ব্যস্ত দুই ইয়া মুটকি স্কার্ট, টপস পড়া পরিচারিকা। চাচ্চুর জানের জান বৃষ্টির সাথে চাচ্চুর একটি দারুন গান পরিবেশন হয় এই ফাঁকে। এখানে বলে রাখা ভালো চাচ্চুর আর ভাতিজার সম্পর্ক আর গানের কথা না শুনে কেউ যদি বোবা অভিনয় দেখে তবে অবাক হয়ে ভাববে কি রে, এতো বড় নায়কের সাথে এই পিচ্চি নায়িকা কেমন করে কি?! দীঘির অভিনয় আর এ্যাপ্রোচ তেমনই ছিলো।

এজিআই পার্কের ম্যানেজারের বোন লন্ডন থেকে ফ্যাশন ডিজাইন-এর উপর পড়ে এসেছেন মালয়েশিয়ান অভিনেত্রী "পারভীন" পুরোটা সিনেমা জুরে যার চমৎকার শালীন উপস্থাপন সপরিবারে দেখার মতো সিনেমাতে অনুপ্রাণিত করবে। এমনকি তাদের বাসর রাতের খাটের চারপাশে ইদুর, বিড়াল খেলাও ছিলো খুবই চমৎকার উপস্থাপন।
কক্সবাজারে হানিমুন করতে গিয়ে শত্রুর গুলিতে আক্রান্ত্ত হয়ে বৃষ্টি যায় মরে। এখানে অবাক হলাম অনন্তর মতো একজন বিজনেস ম্যাগনেটের সিকিউরিটির দূর্বল ব্যবস্থাপনা দেখে।
পরবর্তীতে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে ব্যবসার কাজে মালয়েশিয়া গেলে সেখানে পুত্রজায়া সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে কিডন্যাপড হয় তার স্ত্রী "সন্ধ্যা" আর অনন্ত গুলি খেয়ে মালয়েশিয়ার হসপিটালে। একটু সুস্থ হলে হাসপাতালের বেডেই তাকে একটি সিডি আর একটি ঘরি দিয়ে যাওয়া হয়। সত্যি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, কিরে ভাই, গয়নার বাক্সে দিলো সিডি, আবার ঘড়ি দিলো কেন?!


সিডি চালানোর পর বুঝলাম। স্ত্রী সন্ধ্যাকে নিয়ে ওরা একটি বুলেট প্রুফ কাচের গ্যাস চেম্বারে রেখেছে। যেখানে ৫ দিন পর্যন্ত অক্সিজেন থাকবে এবং তারপর অক্সিজেন শেষে কার্বণডাই অক্সাইডের বিষাক্ততায় সেখানেই মারা যাবে। এর একমাত্র খোলার পথ হলো সেই ঘড়িতে কিবরিয়াদের ৫ জনের আই কন্টাক্ট (রেটিনা স্ক্যান করে) দিলেই তবে সেই ঘর খুলবে।
এর মধ্যে চরম দুঃখের কোষ্ঠকাঠিন্য ভরা হৃদয় খানের কন্ঠে একটা গান গেয়ে ফেলে নায়ক। পরে রাস্তায় গুন্ডাদের হাত থেকে রক্ষা করে বাংলাদেশে এক সময়ের মালয়েশিয়ান রাষ্ট্রদূতের কন্যা (রাশিয়ার নানা)কে।

এখানে নানাকে যেমন দেখাচ্ছে, ম্যুভিতে দেখতে সে আরো অনেক বেশিই আকর্ষণীয়। নানা অনেক ভাবে অনন্তকে সহযোগিতা করে একসময় শত্রুদের হাতে জীবন দেয়ার শেষ সময়ে তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে যায় (আহারে বেচারী!)

একে একে চারজন রাশিয়ান রেসলার স্মাদি, আফ্রিকান বক্সার মাইক বোস, মালয়েশিয়ান বক্সার আটন এবং ইতালিয়ান নিনোর আই কন্টাক্ট নিতে সক্ষম হলেও কিবরিয়ার আই কন্টাক্ট নেবার আগেই হার না মানা কিবরিয়া নিজেকে গুলি করে।
ফলে অনন্ত সেই বুলেটপ্রুফ গ্লাস কোন ভাবেই ভাংতে না পেরে শেষ ভরসা গলায় থাকা লকেট কোরানের আশ্রয় নিয়ে আল্লাহকে ডাকার ফলে ভেঙে যায় সেই দেয়াল।
অতঃপর মধুরেন সমাপয়েত।

ম্যুভির উল্লেখযোগ্য ভালো দিকঃ
১. প্রতিটি নারী চরিত্রের পোষাক এবং শরীরের ভঙ্গি ছিলো শালিন এমন কি বোনাস নায়িকা বা গুন্ডা বাহিনীর নারী সবাই।

২. গানগুলো বেশ শ্রুতিমধুর (যদিও মনে নেই একটারও কথা :( )
৩. গানের কোরিয়গ্রাফ বেশ সুন্দর ছিলো।
৪. সাউন্ড সিস্টেম খুবই ভালো লেগেছে। এমনকি মাইক্রোলেভেলেও তারা সাউন্ডের কাজগুলো বেশ সুচারুরুপেই করেছে।
৫. ৪৩৫ এক্সট্রিম আলট্রা প্রাইম লেন্সের ক্যামেরা আর হলিউডে আর বলিউডে ব্যবহৃত ব্যয়বহুল ক্যামেরার কাজ বেশ দারুন ছিলো।

ম্যুভির যেই কাজ গুলো আরো ভালো হতে পারতোঃ
১. অনন্ত জলীলকে নাচে তেমন পারদর্শী নয় বলেই মনে হলো।

২. নায়কের ভয়েস এখনও সিনেমাপোযোগী নয় বলেই মনে হলো, এক্ষেত্রে অন্য কাউকে দিয়ে ডাবিংয়ের কাজটা করানো যেতো।
৩. ইংরেজী বলার ঢংটা এতোবড় ব্যবসায়ী হিসেবে আরো বেশি চৌকোস হতে পারতো।
৪. ডায়লগ গুলোকে টিভিতে বিজ্ঞাপনের মতো মনে হয়েছে।
৫. নায়িকা লন্ডন থেকে কেমন করে PIA প্লেনে এলো? আমিতো জানি লন্ডন থেকে হয় বৃটিশ এয়ারওয়েজ, গালফ এয়ার বা এমিরাটে আসে। কি জানি PIA -র ব্যাপারটা মনে খচখচ করছে।
৬. শেষে আশা কোরানের লকেটটা হাতে নিয়ে আল্লাহকে বলার পর যদি দেখাতো আলমগীর চোখ খুলেছে তবে ওই অংশটুকু বরং আরো বেশি আকর্ষণীয় হতে পারতো যা ধর্মীয় অস্বাভাবিকতা দিয়ে শেষটাতে কিছুটা আকর্ষণ নষ্টই করা হয়েছে বলবো।

কিছু ব্যাপারে মনে হয়েছে রাজনৈতিক চামচামি করা হয়েছে। যেমন দেশে এখন মানুষ খাবারে কষ্ট পায় না। সরকার এ ব্যাপারে বেশ কাজ করছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ , ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে গলা ফাটানো হয়েছে কয়েকবার।

সবশেষে বলবো...সপরিবারে যেয়ে দেখার মতো চমৎকার একটা সম্ভাবনাময় সিনেমা। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে অনেক। অনন্ত জলিলের ভবিষ্যৎ সিনেমা জীবনের সাফল্য কামনা করি।

১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসের কোন একদিন: পত্র

মানিক ভাই,
আমি মানুষের সাথে মিশতে যেয়ে মানুষের মজ্জার ভেতরে ঢুকে যাই-তার একটাই কারণ- অতোটা ভেতরে না ঢুকলে তার আসল মুখটা দেখতে পাবো না। প্রতিটি মানুষই একটা শক্ত মুখোশ এটেঁ তার চারপাশে ঘুরে বেড়ায়- আমাদের সাধ্য কি তার আসল মুখটা দেখি!! যাই হোক- মেয়েদেরকে নিয়ে আপনার ভেতর কোন হ্যাংলামো নেই-এই একটা মাত্র ব্যাপারই শেষ পর্যন্ত হয়তো আপনার সাথে থাকার জন্যেঅনুপ্রেরণা যুগিয়েছে বা যোগাবে। আমি নিজে প্রচুর ছেলেদের সাথে মিশি-সে ছোটই হোক বা বড়ই হোক। সত্যি কথা বলতে কি ছেলেদের মেয়েদেরকে নিয়ে যে হ্যাংলামিটা আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি আমি নিজেও যেটা করি-কেন করি যদি জিজ্ঞেস করেন বলবো-আপনি   C.U.O থাকাবস্থায় বিভিন্ন রংয়ের কলম রাখতেন কেন?- আমাকে যেই উত্তরটা দিয়েছিলেন সেটাই। মানিক ভাই, অনেক কিছুই করি-আপনার মেজাজ খারাপ হয়, জানি হওয়াটাই স্বাভাবিক। তবুও কিন্তু আপনাকেই দোষারোপ করি। যতো যাই করি প্লিজ সন্দেহ করবেন না। মাথা খারাপ হয়ে যায়। জানেনইতো ইচ্ছে হলে স্ট্রেইটকাট সব বলবো, জীবনটাতো আমার। ভয় পাবেন না "আছি"। আবার সেই একই ব্যাপার খন পর্যন্ত আপনার উপর আমার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা রয়েছে।

নারী-পুরুষ নিয়ে একটি বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলি


নতুন কিছু বিষয় নয়; বাংলা ভাষায় জেন্ডার সম্পর্কে অনেক প্রকাশনা আছে। শুধু আমি যখন জেন্ডার সম্পর্কে তত্ত্ব, তথ্য জানতে চাচ্ছিলাম তখন(২০০৯ এর শেষের দিকে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হতে শুরু করে, শাহবাগে অবস্থিত গণ গ্রন্থাগার এমন আরও অনেক পাঠের জায়গা হতে খুব সুখকর অভিজ্ঞতা নিয়ে আসতে পারিনি। তাই নিজে যতোটা জানলাম তা নিজের কাছে না রেখে আর সবাইকে জানানোর চেষ্টা করে যাবো।

'জেন্ডার' শব্দটি মুলত নারী ও পুরুষ উভয়কেই বোঝায়, বোঝায় নারী-পুরুষকে নিয়ে বৈষম্যহীণ সমাজের, রাষ্ট্রের কথা। সংস্কৃতি ও সমাজ নারী ও পুরুষ সম্পর্কে যে সব দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ গড়ে তোলে, ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করতে শেখায়, কিংবা ভুমিকা পালন করতে বলে, সেসবই হচ্ছে জেন্ডার। যেহেতু নারীরাই সাধারণত প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, পিছিয়ে পড়ছে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, হচ্ছে প্রতিনিয়ত সুবিধা বঞ্চিত, তাই জেন্ডার সম্পর্কে লিখতে যেয়ে আমি সাধারণত নারীকেই গুরুত্ব দেবার চেষ্টা বেশি করেছি। একজন নারী হয়ে নারীকে গুরুত্ব দেয়াটা স্বজনপ্রীতি হতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীর একটা বিশাল অংশকে বাদ দিয়ে বা পেছনে ফেলে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা আদৌ কতোটুকু সম্ভব তা আমার বোধগম্য নয়।

ঢাবি-র ক্যাম্পাস দিয়ে আসতে যেয়ে চোখ আটকে গেল এই পোস্টারে, এই উচ্ছলতা বড্ড টেনে নিল আমায়, উপায় না দেখে ছবি তুলে নিয়ে এলাম পোস্টার থেকেই।
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস অনেকেই এই দিবসটিকে তাচ্ছিল্ল্য করে বলে থাকে একদিন যদি নারীদের দিন হয় তবে বাকী ৩৬৪ দিন (একজনকে বলতে দেখলাম এ বছর ৩৬৫ দিন ) পুরুষের। তবে ২১ শে ফেব্রুয়ারী তো ১ দিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস/ শহীদ দিবস তো বটেই, ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ইত্যাদি এগুলো ১ দিন করে মানে কি?! সিম্বলিক ভাবে একদিন হলেও এগুলোর চর্চা যেন আমরা প্রতিদিনই করি এসব দিবস থেকে কি সেই শিক্ষা আমরা পাই না?! আমাদের কি এসব বিশেষ দিবস থেকে সেই শিক্ষা পাওয়া উচিত নয়?!

আমি নিজে নারী হয়ে আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞান থেকে মনে করি না যে সমান অধিকার চাই, হেন চাই, তেন চাই। পৃথিবীকে বাসযোগ্য সুন্দর করার জন্য প্রকৃতিতে আছেই মূলত দুই ধরণ, নারী এবং পুরুষ। তাদের শরীরের, সমাজের, পারিপার্শ্বিক চাহিদা অনুযায়ী ন্যায্য পাওনাগুলি পুরণের পথ সুগম হোক এই প্রত্যাশাই করি।

বোকা নারী!……..সমান অধিকার নয়, বল ন্যায্য অধিকার চাই (একটি ভাববাদী পোস্ট!)

সম্রাট আকবরের সময় নাকি বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খেত, তো সে সময়ের এক রাজা ঠিক করলেন বাঘ আর মহিষকে তার প্রাসাদে দাওয়াত খাওয়াবেন। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, বাঘ আর মহিষ এলো দাওয়াত খেতে, তাদের দুইজনের সামনে খুবই সমাদর করে বিশাল বিশাল দুইটা হরিণের রোস্ট খেতে দেওয়া হলো। বাঘ তো মহা খুশি! আহা এতো মজার সুস্বাধু খাবার কতদিন খাইনা বলেই ইয়ামি! ইয়ামি! বলে খাওয়া শুরু করলো…চেটে পুটে সবটা খেয়ে সাথে কোমল পাণীয় খেয়ে বোয়াক করে একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুললো। এদিকে তো মহিষ বেচারা মন খারাপ করে, মুখ চুন করে বসে আছে, সে কি করে খাবে এই হরিণের মাংস!? কোনদিন খায়নি হরিণের মাংস, কি করে খেতে হয় তাও জানেনা, সবচেয়ে বড় কথা হলো তার শরীরের গঠণ, তার খাদ্যাভাসে, তার পরিপাকতন্ত্রের গঠণেই মাংস খাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই দেখে তো রাজার মাথায় হাত, হায়! হায়! মেহমান খেতে পাচ্ছেনা…
পরের বার আবার দাওয়াত দেওয়া হলো, এবার কিন্তু রাজা মশাই আর ভুল করলেন না। এবার দুজনের সামনেই নরম কচি তাজা তাজা সবুজ ঘাস দেওয়া হলো। মহিষের তো আজকে পোয়া বারো! জিভে জল এসে যাচ্ছে! সে আর সইতে না পেরে হম্ হম্ করে সুস্বাদু, পুষ্টিকর ঘাস খাওয়া শুরু করলো। বাঘ বেচারার তো গালে হাত, সে কি খাবে! ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। এই দেখে রাজামশায় তো ফাঁপরে পরে গেলেন, কি মুশকিল! এদের দুজনকে তো ঠিক মতো মেহমানদারী করা যা্চ্ছে না।
পরের বার রাজা মশায় গত দুইবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাঘ কে দিলেন বিশাল বড় আকারের হরিণের রোস্ট, আর মহিষকে দিলেন বিরাট বড় রাজ থালায় তাজা তাজা ঘাস। এইবার বাঘ আর মহিষ দুইজনেই পেট পুরে, আয়েশ করে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে তুলতে হাসি মুখে রাজার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। রাজাও এবার বুঝলেন যে কখন, কাকে, কিভাবে তার প্রয়োজন মতো, চাহিদা অনুয়ায়ী ব্যবস্থাপত্র দিতে হয়।

নারী....আর কতোকাল রবে শুধুই অর্কিড হয়ে!!!


উৎসর্গ: সুবিধা বঞ্চিত নারী, তোমার চরণে


প্রচলিত ধ্যান-ধারণা হচ্ছে নারী হবে নরম-কোমল, সর্বংসহা (মাতা), মনোরঞ্জনকারিনী (বধূ)।
তারা থাকবে অন্দরমহলে।
আর তাই প্রবাদে শোনা যায়...
'ঝি নষ্ট হয় হাঁটে, বউ নষ্ট হয় ঘাটে'।....অর্থাৎ ঝি কে হাঁটে-বাজারে-মার্কেটে পাঠানো যাবে না আর বউকে পুকুর ঘাটে পাঠানো যাবে না (যদিও গ্রাম এলাকায় পরিবারের পানির যোগান দাতা সাধারণত নারীই)। অন্দর মহলের নারী, মাতা-বধূ যখন স্বামীর মৃত্যুতে, স্বামীর নির্যাতন ইত্যাদি আরো বিভিন্ন কারণে আশ্রয়হীন হচ্ছে, স্বামীর দূরারোগ্য ব্যাধিতে/ অন্যান্য প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অর্থকষ্টে অন্যের কাছে হাত পাতছে, কন্যা শিশুটির যখন আর স্বাভাবিক, নিরাপদ শৈশব, কৈশোরের নিশ্চয়তা থাকে না তখন প্রশ্ন জাগে মনে, তাহলে অন্দর মহলের এই হেরেমবাসিনী মাতা-বধূ-কন্যার ভবিষ্যৎ কি? সে কি তার বাবা-ভাইয়ের কাছে আশ্রয়, সাহায্য প্রার্থনা করবে, শিশুটি অন্যের গলগ্রহ হয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে বেড়ে উঠবে?


আর তাই প্রয়োজন নিরাপদ শৈশবের, প্রয়োজন আত্ননির্ভরশিলতার, শিক্ষার যেই শিক্ষা তাকে আলোর পথ দেখাবে, বলবে মুক্তির কথা। যে অন্যের কাঁধের বোঝা হয়ে নয় বরং নিজে একাই পথ চলতে পারবে আপন আলোয়।


শব্দের অর্থ:
ঝি: মেয়ে/ কন্যা শিশু/ নারী
হাত পাতা: সাহায্য প্রার্থনা করা

সৌদি নারী...অতঃপর রোকেয়া

১৪ তারিখের প্রথম আলো পত্রিকায় একটা খবরে চোখ আটকে গেল 'শুধুই নারীদের'। যোগ-বিয়োগ করছিলাম, কি হওয়া উচিত ছিল/হবে, কি হওয়া উচিত নয়।...দুই হাজার একর জমি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। কিন্তু এই ক্যাম্পাসে একজনও পুরুষ থাকবে না।...খবরটা মজা পাওয়ার মতো নিঃসন্দেহে। নারী-পুরুষ দুই পক্ষ মিলেই তো বাসযোগ্য করবে আমাদের এ পৃথিবী। বিজ্ঞান, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদিতে থাকবে উভয়েরই অবাধ পদচারণা। কিন্তু যে দেশে নারীদের জন্য মানবাধিকারের মৌলিক শর্ত গুলোই (ধারা-৩) পূরণ হচ্ছেনা সেখানে নারীর উচ্চশিক্ষার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতেই হয়। যদি আজ থেকে প্রায় একশ বছর পেছনে তাকাই বেগম রোকেয়ার (রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন১৮৮০-১৯৩২) জীবনে যিনি সৌদি নারীদের মতো প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাননি কিন্তু তার দেখানো আলোতে এখনও আমরা পথ দেখি।তার Sultana's Dream রচনাটির সাথে বিশেষ করে যাদের পরিচয় আছে তাদের পক্ষে সহজেই বোঝা সম্ভব তার মননশীলতার চর্চা কত উচ্চমানের হতে পারে। হয়তো সেই দিন বেশী দূরে নয় যখন কোন সৌদি রোকেয়া এমনি করে পথ দেখাবে সৌদি নারীদের।

(বি.দ্রঃ ১. সৌদি আরবের শাসন শুধু মাত্র মুসলিম আইন মেনে নয় বরং তাদের নিজস্ব কিছু প্রথা, রীতি-নীতিও মেনে চলে, এর সংস্কার প্রয়োজন।
২. আর কবির ভাষায় ...অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক জোৎস্নায় পাক ঠাঁই কিছুটাতো চাই, কিছুটাতো চাই।...)


তথ্যসূত্র:
১. শুধুই নারীদের, দৈনিক প্রথমআলো, ১৪ জুলাই ২০১১
২. গোলাম মুরশিদ, রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া, নভেম্বর ২০০০, বাংলা একাডেমী
৩. Click This Link
৪. http://www.unhchr.ch/udhr/lang/bng.htm

শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১২

আমার প্রথম ম্যুভি রিভিউ- " দ্য স্পীড"


অনেকদিন পর বলাকায় গেলাম বাঙলা সিনেমা  অনন্ত জলীল অভিনিত ম্যুভি "দ্য স্পীড" দেখতে। সিনেমা শুরুর আগে পর্দা সরে গেল সিনেমা হলের এবং স্বাভাবিক ভাবেই জাতীয় সংগীত মিউজিকে পরিবেশন । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম প্রায় ৩০% দর্শক সে সময় বসা থেকে উঠার নাম পর্যন্ত করেনি এই কয়েক মিনিট দাড়িয়ে জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শণ করতে।
 সিনেমার শুরুই হলো বেশ দারুন সাউন্ডের ইফেক্ট দিয়ে। "দ্য স্পীড" নামটিকে সার্থক করতেই হয়তো।
 মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অনন্ত একজন সৎ দেশপ্রেমিক CIP ।সিনেমার শুরুতেই দেখা গেল বেশ ব্যায়াম করছেন। একজন নায়ক হিসেবে দর্শকদের কাছে যা বেশ আকর্ষণীয় বটে। অনন্ত জলীলকে নিয়ে অনেক মজার মজার কথা এর আগে শুনেছি। শুনে অভিজ্ঞতা তেমন ভালো ছিলো না। কিন্তু অনন্তর এপ্রোচ দেখে বেশ আশার আলো দেখতে পেলাম।
ছোটবেলাতেই বাবা-মা মারা যাওয়ায় বড় ভাইয়ের কাছে বড় হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের গুলিতে ভাই-ভাবী নিহত হলে বড় ভাইয়ের ব্যবসার দায়িত্ব নিয়ে অনন্ত তার সততায় সেটাকে AJI Park (অনন্ত জলিল ইন্ডাস্টিয়াল পার্ক) বানাতে সক্ষম হন।
এদিকে দূর্নীতিবাজ কিবরিয়া (আলমগীর) তার ব্যবসায় লস খেতে শুরু করেন অনন্তর সৎ ব্যবসার জন্যে। ফলে সন্ত্রাসী দিয়ে অনন্তর উপর হামলা হয়। অনন্তর সিকিউরিটি সিস্টেম ভেঙ্গে গেলেও শেষে অনন্ত নিজেই অস্ত্র হাতে তুলে ঘায়েল করে ফেলেন সব শত্রুদের এবং কিবরিয়াকে বাসায় যেয়ে বলে আসেন " নীতিবানরা দূর্নীতিবাজদের চ্যালেঞ্জ করে না, থ্রেট দেয়"  এদিকে বিদেশী এন্ড্রু তার ব্যবসায় সমুহ ক্ষতি হয়ে যাবার ভয়ে কিবরিয়াকে সামলাতে না পেরে অনন্তর কাছে গেলে অনন্ত তার মুখোশ খুলে দেন। দেশী খেলোয়াররা যে বিদেশে যেয়ে আর দেশে ফিরে আসে না তাদেরই একজন এনায়েতুল্লাহ এখন বদলে নিজেকে বানিয়েছে এন্ড্রু তা অনন্ত এ্যান্ড্রুর মুখের উপর বলে দেয়্।

এদিকে বড় ভাইয়ের রেখে যাওয়া একমাত্র কন্যা দৃষ্টি (দীঘি)র সেবায় সারাক্ষণ ব্যস্ত দুই ইয়া মুটকি স্কার্ট, টপস পড়া পরিচারিকা। চাচ্চুর জানের জান বৃষ্টির সাথে চাচ্চুর একটি দারুন গান পরিবেশন হয় এই ফাঁকে। এখানে বলে রাখা ভালো চাচ্চুর আর ভাতিজার সম্পর্ক আর গানের কথা না শুনে কেউ যদি বোবা অভিনয় দেখে তবে অবাক হয়ে ভাববে কি রে, এতো বড় নায়কের সাথে এই পিচ্চি নায়িকা কেমন করে কি?! দীঘির অভিনয় আর এ্যাপ্রোচ তেমনই ছিলো।

এজিআই পার্কের ম্যানেজারের বোন লন্ডন থেকে ফ্যাশন ডিজাইন-এর উপর পড়ে এসেছেন মালয়েশিয়ান অভিনেত্রী "পারভীন" পুরোটা সিনেমা জুরে যার চমৎকার শালীন উপস্থাপন সপরিবারে দেখার মতো সিনেমাতে অনুপ্রাণিত করবে। এমনকি তাদের বাসর রাতের খাটের চারপাশে ইদুর, বিড়াল খেলাও ছিলো খুবই চমৎকার উপস্থাপন।
কক্সবাজারে  হানিমুন করতে গিয়ে শত্রুর গুলিতে আক্রান্ত্ত হয়ে বৃষ্টি যায় মরে। এখানে অবাক হলাম অনন্তর মতো একজন বিজনেস ম্যাগনেটের সিকিউরিটির দূর্বল ব্যবস্থাপনা দেখে।
পরবর্তীতে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে  ব্যবসার কাজে মালয়েশিয়া গেলে সেখানে পুত্রজায়া সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে কিডন্যাপড হয় তার স্ত্রী "সন্ধ্যা" আর অনন্ত গুলি খেয়ে মালয়েশিয়ার হসপিটালে। একটু সুস্থ হলে হাসপাতালের বেডেই  তাকে একটি সিডি আর একটি ঘরি দিয়ে যাওয়া হয়। সত্যি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, কিরে ভাই, গয়নার বাক্সে দিলো সিডি, আবার ঘড়ি দিলো কেন?!


সিডি চালানোর পর বুঝলাম। স্ত্রী সন্ধ্যাকে নিয়ে ওরা একটি বুলেট প্রুফ কাচের গ্যাস চেম্বারে রেখেছে। যেখানে ৫ দিন পর্যন্ত অক্সিজেন থাকবে এবং তারপর অক্সিজেন শেষে কার্বণডাই অক্সাইডের বিষাক্ততায় সেখানেই মারা যাবে। এর একমাত্র খোলার পথ হলো সেই ঘড়িতে কিবরিয়াদের ৫ জনের আই কন্টাক্ট (রেটিনা স্ক্যান করে) দিলেই তবে সেই ঘর খুলবে।
এর মধ্যে চরম দুঃখের কোষ্ঠকাঠিন্য ভরা হৃদয় খানের কন্ঠে একটা গান গেয়ে ফেলে নায়ক। পরে রাস্তায় গুন্ডাদের হাত থেকে রক্ষা করে বাংলাদেশে এক সময়ের মালয়েশিয়ান রাষ্ট্রদূতের কন্যা (রাশিয়ার নানা)কে।

এখানে নানাকে যেমন দেখাচ্ছে, ম্যুভিতে দেখতে সে আরো অনেক বেশিই আকর্ষণীয়। নানা অনেক ভাবে অনন্তকে সহযোগিতা করে একসময় শত্রুদের হাতে জীবন দেয়ার শেষ সময়ে তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে যায় (আহারে বেচারী!)

একে একে চারজন রাশিয়ান রেসলার স্মাদি, আফ্রিকান বক্সার মাইক বোস, মালয়েশিয়ান বক্সার আটন এবং ইতালিয়ান নিনোর আই কন্টাক্ট নিতে সক্ষম হলেও কিবরিয়ার আই কন্টাক্ট নেবার আগেই হার না মানা কিবরিয়া নিজেকে গুলি করে।
ফলে অনন্ত  সেই বুলেটপ্রুফ গ্লাস কোন ভাবেই ভাংতে না পেরে শেষ ভরসা গলায় থাকা লকেট কোরানের আশ্রয় নিয়ে আল্লাহকে ডাকার ফলে ভেঙে যায় সেই দেয়াল।
অতঃপর মধুরেন সমাপয়েত।

ম্যুভির উল্লেখযোগ্য ভালো দিকঃ
১. প্রতিটি নারী চরিত্রের পোষাক এবং শরীরের ভঙ্গি ছিলো শালিন এমন কি বোনাস নায়িকা বা গুন্ডা বাহিনীর নারী সবাই।

২. গানগুলো বেশ শ্রুতিমধুর (যদিও মনে নেই একটারও কথা :( )
৩. গানের কোরিয়গ্রাফ বেশ সুন্দর ছিলো।
৪. সাউন্ড সিস্টেম খুবই ভালো লেগেছে। এমনকি মাইক্রোলেভেলেও তারা সাউন্ডের কাজগুলো বেশ সুচারুরুপেই করেছে।
৫. ৪৩৫ এক্সট্রিম আলট্রা প্রাইম লেন্সের ক্যামেরা আর হলিউডে আর বলিউডে ব্যবহৃত ব্যয়বহুল ক্যামেরার কাজ বেশ দারুন ছিলো।

ম্যুভির যেই কাজ গুলো আরো ভালো হতে পারতোঃ
১. অনন্ত জলীলকে নাচে তেমন পারদর্শী নয় বলেই মনে হলো। 

২. নায়কের ভয়েস এখনও সিনেমাপোযোগী নয় বলেই মনে হলো, এক্ষেত্রে অন্য কাউকে দিয়ে ডাবিংয়ের কাজটা করানো যেতো।
৩. ইংরেজী বলার ঢংটা এতোবড় ব্যবসায়ী হিসেবে আরো বেশি চৌকোস হতে পারতো।
৪. ডায়লগ গুলোকে টিভিতে বিজ্ঞাপনের মতো মনে হয়েছে।
৫. নায়িকা লন্ডন থেকে কেমন করে PIA প্লেনে এলো? আমিতো জানি লন্ডন থেকে হয় বৃটিশ এয়ারওয়েজ, গালফ এয়ার বা এমিরাটে আসে। কি জানি  PIA -র ব্যাপারটা মনে খচখচ করছে।
৬. শেষে আশা কোরানের লকেটটা হাতে নিয়ে আল্লাহকে বলার পর যদি দেখাতো আলমগীর চোখ খুলেছে তবে ওই অংশটুকু বরং আরো বেশি আকর্ষণীয় হতে পারতো যা ধর্মীয় অস্বাভাবিকতা দিয়ে শেষটাতে কিছুটা আকর্ষণ নষ্টই করা হয়েছে বলবো।

কিছু ব্যাপারে মনে হয়েছে রাজনৈতিক চামচামি করা হয়েছে। যেমন দেশে এখন মানুষ খাবারে কষ্ট পায় না। সরকার এ ব্যাপারে বেশ কাজ করছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ , ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে গলা ফাটানো হয়েছে কয়েকবার।

সবশেষে বলবো...সপরিবারে যেয়ে দেখার মতো চমৎকার একটা সম্ভাবনাময় সিনেমা। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে অনেক। অনন্ত জলিলের ভবিষ্যৎ সিনেমা জীবনের সাফল্য কামনা করি।


http://www.youtube.com/watch?v=-gCzc1BCm6g

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites