ম্যুভি রিভিউ- "দ্য স্পীড"

অনেকদিন পর বলাকায় গেলাম বাঙলা সিনেমা অনন্ত জলীল অভিনিত ম্যুভি "দ্য স্পীড" দেখতে। সিনেমা শুরুর আগে পর্দা সরে গেল সিনেমা হলের এবং স্বাভাবিক ভাবেই জাতীয় সংগীত মিউজিকে পরিবেশন । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম প্রায় ৩০% দর্শক সে সময় বসা থেকে উঠার নাম পর্যন্ত করেনি এই কয়েক মিনিট দাড়িয়ে জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শণ করতে। সিনেমার শুরুই হলো বেশ দারুন সাউন্ডের ইফেক্ট দিয়ে। "দ্য স্পীড" নামটিকে সার্থক করতেই হয়তো।

১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসের কোন একদিন

মানুষের জীবনে বোধ সঞ্চারের এক নির্ভেজাল উপাদানের নাম কবিতা। কবিতা কখনো মানুষের মনকে রাঙিয়ে দেয়, কখনো বদনার কালো রঙ ঢেলে উপলব্ধিগুলোকে সতেজ করে তোলে; জীবন দর্শনের পথকে করে প্রশস্ত।

নারী-পুরুষ নিয়ে একটি বৈষম্যহীন সমাজের কথা বলি

'জেন্ডার' শব্দটি মুলত নারী ও পুরুষ উভয়কেই বোঝায়, বোঝায় নারী-পুরুষকে নিয়ে বৈষম্যহীণ সমাজের, রাষ্ট্রের কথা। সংস্কৃতি ও সমাজ নারী ও পুরুষ সম্পর্কে যে সব দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ গড়ে তোলে, ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করতে শেখায়, কিংবা ভুমিকা পালন করতে বলে, সেসবই হচ্ছে জেন্ডার।

সৌদি নারী...অতঃপর রোকেয়া

যদি আজ থেকে প্রায় একশ বছর পেছনে তাকাই বেগম রোকেয়ার (রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন১৮৮০-১৯৩২) জীবনে যিনি সৌদি নারীদের মতো প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাননি কিন্তু তার দেখানো আলোতে এখনও আমরা পথ দেখি।

নারী....আর কতোকাল রবে শুধুই অর্কিড হয়ে!

প্রচলিত ধ্যান-ধারণা হচ্ছে নারী হবে নরম-কোমল, সর্বংসহা (মাতা), মনোরঞ্জনকারিনী (বধূ)। তারা থাকবে অন্দরমহলে। আর তাই প্রবাদে শোনা যায়... 'ঝি নষ্ট হয় হাঁটে, বউ নষ্ট হয় ঘাটে'।....অর্থাৎ ঝি কে হাঁটে-বাজারে-মার্কেটে পাঠানো যাবে না আর বউকে পুকুর ঘাটে পাঠানো যাবে না (যদিও গ্রাম এলাকায় পরিবারের পানির যোগান দাতা সাধারণত নারীই)।

শুক্রবার, ২৬ জুলাই, ২০১৩

ভাবনার জগতকে নাড়িয়ে দেয়া ঋতুপর্ণ ঘোষের সিনেমাগুলো

"দহন"
ঋতুপর্ণ ঘোষের "দহন" দেখলাম ।

 দেখছিলাম আর জ্বলছিলাম...কষ্টে কষ্টে নীল হয়ে যাচ্ছিলাম । জীবনের এতো কাছ থেকে নেয়া বলেই এই ধরনের সিনেমাগুলোকে মনে হয় জীবনধর্মী সিনেমা বলা হয়। যা আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করে। আমাদের মাঝে অতি আপনজনের পর হয়ে উঠা, অপরিচিত হয়ে উঠা...হৃদয়ের রক্তক্ষরণ চারপাশটাকে লালে লাল হয়ে জমাট বেঁধে ফেলা...

সত্যিই প্রতিটা মেয়ের কানে কানে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে...নারী... এতো আধুনিকতা, এতো শিক্ষা, ক্ষমতায়ন...তুমি কি সত্যিই তোমার পাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছ ?!

উইকিপিডিয়ায় "দহন"

আইএমডিবি-র রেটিং ৮.১
ইউটিউবে "দহন"



"খেলা "


আমি কখনোই সেভাবে সাপোর্ট করি নি, বিদেশী সিনেমা আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কোনভাবে প্রভাব ফেলতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে চলুক নিয়মিত। বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমাতো নয়ই (আর পাকিস্তানী সিনেমার প্রশ্নই উঠে না)।

কিন্তু ঋতুপর্ণ ঘোষের দুদিন আগে দেখা "দহন" আর আজকে দেখলাম "খেলা" দেখে মনে হচ্ছে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কিছু শেখানোর জন্যে হলেও এসব সিনেমা চালানো উচিত প্রেক্ষাগৃহগুলোতে।

এতো জীবন ঘনিষ্ট ! মনে হয় নিজের জীবনের লুকিয়ে রাখা, জানালার পাশে অভিমান করে দাড়িয়ে থাকার মুহুর্তগুলো এই লোক জানলো কেমন করে?!
কেমন করে জানলো বরের সাথে কতোদিন রাগ করে ভেবেছি ...এই অপেক্ষার শেষ হোক।
নিজের অনুভবে রাখা দৃশ্য গুলো এই লোক এতো অবলীলায় কিভাবে সেলুলয়েডের ফিতায় আটকালো ....?!!!

আমার অনেক টাকা নেই। না হলে বড় পর্দায় দেখানোর দায়িত্বটা আমিই নিতাম আমাদের অবহেলিত, সিনেমা পাগল, বুভুক্ষ দর্শকদের জন্যে ।
উইকিপিডিয়ায় "খেলা"
"খেলা" আইএমডিবির রেটিং ৭.৪ 

ইউটিউবে "খেলা"

"উনিশে এপ্রিল"

ঋতুপর্ণ ঘোষের "উনিশে এপ্রিল" দেখার সময় ছোড়া প্রসেনজিৎকে দেখে চমকে উঠেছিলাম ! পরে বুঝলাম আমি নিজেই ১৭ বছর পেছনে পরে আছি।...তবুওতো পেছন থেকে উঠে আসার চেষ্টা...তাই বা কম কি !

সিনেমাটা দেখার এক পর্যায়ে মনে মনে বলে উঠেছিলাম ...কুত্তার বাচ্চা ! তুই যদি মায়ের পছন্দের লুতুপুতু মেয়েই বিয়ে করবি তাইলে প্রেম করতে গেলি ক্যান ! গররররর....

আমি বাস্তবে এভাবে গালি দেই না... দিয়ে অভ্যস্থ্য না। কিন্তু ক্রোধ চেপে রাখতে পাচ্ছিলাম না...মা, ডাক্তার মেয়ে পছন্দ করবে না, মা একটু ঘরোয়া বউ চায় এবং পরবর্তীতে মেয়ের মা-বাবার পেশা নিয়ে পরে যায় টানা হেচড়া ...এসব ইতং বিতং যে ছেলে ভাবে সে ক্যান প্রেম করে একটা মেয়ের জীবনকে এভাবে বিবর্ণ করে দেয় ?!

কিন্তু আমার দেখার ধারাবাহিকতাকে কিভাবে অদ্ভুতভাবে বদলে দিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কের টানা পোড়েন থেকে ক্যারিয়ারিস্ট মা আর দিনের পর দিন মায়ের ব্যাস্ততায় সন্তানের দুরে সরে যাওয়া......
স্বামীর সাথে স্ত্রীর প্রফেশনাল (বরং ফিনানশিয়াল বলি) কনফ্লিক্ট ! স্ত্রীর বেশি খ্যাতি, টাকা কামানোকে স্বামীর মেনে নিতে না পারা...

একই ঘরের বাসিন্দা হয়েও দুই ভুবনে রয়ে যাওয়া... বড্ড কষ্ট পাচ্ছিলাম।

একটা সময় চোখের কোনে হয়তো একটু জলের আচঁ পাচ্ছিলাম...বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা...

বোঝাপড়া গুলো ভালো থাকলে, স্বচ্ছ থাকলে...সম্পর্কের উন্নতি হতে বাধ্য । এর জন্যে চাই দুজনকে দুজনের বোঝার চেষ্টা। যা দুই পক্ষেরই উচিত।




রেইনকোট

ঋতুপর্ণ_ঘোষ‬
এর ‪‎রেইনকোট‬ দেখলাম।
এটাই প্রথমবার না। এর আগেও কয়েকবার কিছু অংশ দেখে ছেড়ে দিয়েছি। টানতে পারে নি আমায়। স্লো বলেই হয়তো... অথবা ইদানিং হিন্দি চ্যানেলের অনাগ্রহটাও হয়তো ভর করেছিল সিনেমাটা দেখার সময়।

যাই হোক, বেশ কিছুদিন/মাস ধরেই নারীদের শক্ত অবস্থানে থাকা সিনেমা খুঁজতাম মনে মনে। তা যে কোন ভাষারই হোক।

ঋতুপর্ণ ঘোষের দহন‬, ‪‎খেলা‬, উনিশে_এপ্রিল‬ দেখে আমার সেই আগ্রহ যথেষ্টই মিটেছে।

বলছিলাম "রেইনকোট" এর কথা ।

অনেক বড় ঘরণী ঘর পায় না...
অনেক বড় সুন্দরী বড় পায় না...

এককথায় এই হলো রেইনকোট.......।।

প্রথম দিকে ঝিমানো ভাব থাকলেও সিনেমাটার মাঝ বরাবর এসে নীরুর অনুপস্থিতিতে বাড়িওয়ালার আগমন এবং এরপর ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোই দর্শকদের চাঙ্গা করে তুলতে যথেষ্ট।

একটা বিষয় খুব অবাক করা ! আমার খুব পরিচিত একজন তার বিয়ের প্রথম ৩ বছর তার বাসায় জানায়ই নি যে কতোটা মানসিক অশান্তিতে আছে। বরং শ্বশুড়বাড়ির যতো পজিটিভ কথা সে সবাইকে বলে বেড়াতো হাসি মুখে ।

৩ বছর পর সেই পরিচিতার নিকটাত্নীয় ওর শ্বশুরবাড়িতে এসে ইনকোয়ারী করলে বেড়িয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর, কষ্টকর জীবনের কাহিনী।

যাই হোক...আমি নীরুর হাসি মুখে একেরপর এক বলা ভোলানো কথায় একটু সন্দেহ করছিলাম বটে ! কিন্তু তা এমন নির্মম সত্য হবে ! বুঝি নি।

আর ভালোবাসা সত্যিকারের হলে ভালোবাসার মানুষটির যে কোন ক্ষতি দেখে অন্যপক্ষ যখন সেই কষ্ট দূর করার জন্যে নিদোর্ষ চেষ্টা করে তখন সেই ভালোবাসাকেই কি স্বর্গীয় ভালোবাসা বলে ?

The_Gift_of_the_Magi যারা পড়েছেন তারা রেইনকোট-এর সার্থকতা ভালো বুঝতে পারবেন।

রেইনকোট এর ইউটিউব লিংক
উইকপিডিয়ায় রেইনকোট
আইএমডিবি রেটিং -এ " রেইনকোট " ১০-এ ৭.১


আবহমান
ঋতুপর্ণ_ঘোষ‬ এর আবহমান‬ দেখার শুরুতে আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে...

"চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে আমার হৃদয়টাকে রক্তাক্ত করার পর যে রক্তচুম্বণটা দাও,
সেই রক্ত চুম্বনের নেশায় আমি বার বার নেশাগ্রস্থ হতে চাই................."

এটা রূপক অর্থে বলা হয়েছে... যারা আবহমান দেখেছেন তারা আমার এই কথার মর্ম বুঝবেন।

দেখার শুরুতে হেব্বি চাঙ্গা মুডে ছিলাম !
চাঙ্গা এতোটাই ছিলাম যে, রিতিমতো কাব্য সৃষ্টি করে ফেলেছিলাম !
মাঝখানে বেশ কিছু কাজ সেরে আবার দেখতে বসলাম ....!
....................................................!
আমি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না !
#আবহমান নিয়ে কিছু আদৌ লিখতে পারবো কি না বুঝতে পাচ্ছি না !
 
 শেষ করার পর আমি "তব্দা" বলতে যা বোঝায় তাই হয়ে গেছি !
আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে !
হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে !
আমি আমার চোখ থেকে বেরিয়ে আসা জলের স্রোত থামাতে পাচ্ছি না !
কোন সিনেমা দেখে সিনেমা যে বানিয়েছে তাকে অনুভব করেছি এমন হয় নি !
কিন্তু আজকে করতে পাচ্ছি !
আমি অনেক দেরী করে ফেলেছি !
বড্ড বেশিই দেরী করে ফেলেছি ............!

ইসসস ! এই মানুষটা কেন আরো অনেকগুলো বছর বেঁচে থেকে আরো আরো সিনেমা বানালো না !

বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

অনুগল্প : "শোধ"- শুরুর পরে/শেষের আগে

ICMAB এর সামনে দিয়ে যখন আসছিল তখন বেশ বাতাস বইছিল। নীলক্ষেত থেকে কাটাবনের দিকে যেতে আইসিএমএবির গেটের উত্তর পাশের বসা লোকটার দৃষ্টি খেয়াল করে মুক্তা দেখলো তার কামিজের কাপড়টা একটু উড়ে গিয়ে উপরে উঠে গেছে। আর হাটুর অল্প উপরে উঠে যাওয়া সালোয়ার-এর উপর দিয়ে সেই লোক কি দেখার চেষ্টা করছে তা সেই জানে !
এক বৃষ্টির সন্ধ্যায় আইইআর এর ক্লাস শেষ করে মহসীন হলের মাঠের পাশ দিয়ে ছাতা মাথায় অন্ধকারে ফেরার পথে সবেগে চলা এক খালি রিক্সার চালক দ্রুততার সাথে ওর গায়ে হাত মেরেছিল ও কষ্ট পাওয়ার চেয়ে অবাক হয়েছিল !
পোশাকের শালীলতায় ওর শত্রুরাও ওকে কোন বাজে কথা শোনানোর কথা ভাবে না। তাহলে এই রিক্সাওয়ালার অন্ধকারে পোশাকে আবৃত এক নারীকে দেখেই তার আদিম প্রবৃত্তি জেগে উঠল ?!
"তবে যে ধর্ষনের কারণ হিসেবে মেয়েরা নাকি প্রভোকিং ক্যারেক্টার হিসেবে কাজ করে ?! কিভাবে সেটা?!"
মুক্তা আমায় জিজ্ঞেস করেছিল ।
আমি চুপসে যাওয়া মুখে কোন রকমে শুধু বলেছিলাম -"ওরা সব পশু রে, মুক্তা !"
অফিসের ড্রাইভার বলে ওকে বাদ দেবার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু মুক্তার রাসেলকে মাঝে মাঝে একদমই ভালো লাগে না !
প্রাইভেট কার বলে একটু আরাম করেই বসতে না পারলে কিসের প্রাইভেট কার ! তবেতো বাসই ভালো ...বিড়বিড় করে মুক্তা !
কখনো বসতে যেয়ে কামিজটা একটু হাটুর উপরে উঠে গেলেও রাসেলের হায়েনা মার্কা চোখ মিস করে না তা দেখতে ! কারের সামনে বা পাশে বা কাছাকাছি কোন নারীকে দেখলেতো মুক্তার রিতিমতো টেনশন লেগে যায় সেই নারীর দিকে তাকাতে তাকাতে রাসেল না আবার এক্সিডেন্ট করে বসে !
নাহ, রাসেল কখনোই এক্সিডেন্ট করে নি ! খুবই দক্ষতার সাথে এবং সুযোগ পেলে খুবই স্পীডে গাড়ি চালিয়েছে ।
রাসেলের কাছ থেকেই মুক্তার ভেতর এই রোগটা সম্ভবত সংকমিত হয়েছে...রাস্তায় কোন মেয়ে দেখলে মাথা থেকে পা পর্যন্ত মেয়েটির চোখে পড়ার আগেই দেখে নেয়া।
মুক্তা খুব মন খারাপ করে আমায় বলেছে..."জানিস, পনি, রাসেলের সুন্দরী বউতো বটেই একটা বাচ্চাও আছে !"
মাঝে মাঝেই রাসেল বেশ তাগাদা দিত, জোর করতো ..."ভাবী, স্যার তো সময় পাবে না, আপনি নিজে থেকেই ড্রাইভিংটা শিখে নেন । " আমি কয়েকদিন দেখিয়ে দিলেই পারবেন।
দৃষ্টির সমস্যা থাকলেও এমনিতে সব ব্যাপারে খুবই আন্তরিক রাসেলের কথায় মুক্তা সায়ও দিয়েছিল। সুমিতকে না জানিয়ে কখনো কখনো প্র্যাকটিস করেছেও রাসলের সহযোগিতা নিয়ে। নাহ, স্টিয়ারিং কট্রোলে রাসেল সচেতনভাবে হাত ছোঁয়ার চেষ্টা করে নি। কিন্তু মুক্তা যখন ড্রাইভিং সিটে বসা অবস্থায় থাকতো তখন রাসেলের দৃষ্টি ঘুরতো মুক্তার উপর ! বড্ড অস্বস্তি, বড্ড অসহ্য লাগতো সেই দৃষ্টি !
তাই আর ড্রাইভিংয়ের প্র্যাকটিসটা কন্টিনিউ করা হয় নি, আর সুমিতও পেরে আড়ালে মুক্তাকে নিষেধ করে দিয়েছিল। যদিও রাসেলের ব্যাপার সরাসরি কিছু বলে নি।
কখনো কোন লম্বা ট্রিপে গেলে ওদের সাথে ওর হোম এ্যাসিস্ট্যান্ট নাজুও থাকতো । বমি করতে যখন নাজু অস্থির হয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি থেকে নামতো তখন মুক্তা নামার আগেই "ভাবী, আপনি বসেন" বলে রাসেল দৌড়াতো নাজুকে হেল্প করতে...ওদের সখ্যতা দেখে রাসেলের বৌ-এর মুখটা মুক্তার বড্ড মনে পড়ে যেতে বারবারই ...
বিভিন্নভাবে নাজুকে রাসেল-এর সাথে কথা বলা, মেশা থেকে দুরে রাখার চেষ্টায় মুক্তার কোন কমতি ছিল না। ....
কেমন যেন অলুক্ষুণে, কুডাক মুক্তার মনে বারবারই ডেকে যেতে চায় ! মুক্তা নিজেকেই ধমক দেয় ... নিজেকেই পাপী মনের মনে করে নিজেকে প্রবোধ দেয় ...
তারপরও মুক্তার মন থেকে খচখচানি কমে না .... !

সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৩

অনুগল্প: পরিচয়হীন



বেরিয়ে এলাম, বেশ্যা হলাম
কুল করলাম ক্ষয়
এখন কি না ভাতার শালা
ধমকে কথা কয় !

কথা গুলো চিবিয়ে চিবিয়ে যখন মুক্তা আমায় বলছিল , আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম !

ভার্সিটিতে একই হলে থাকার সুবাদে জানতাম ওর প্রেমের কথা।
মাস্টার্স-এর পরীক্ষা যখন শেষের দিকে ওকে আটকানোর জন্যে বাড়ি থেকে টাকা দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়, যেনো পরীক্ষার পর ও বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয়।
বাড়ির মানুষজন কানাডা প্রবাসী ছেলে ঠিক করে রেখেছে বিয়ে দিতে।

মুক্তার মাথায় তখন বিয়ে নিয়ে কোন পরিকল্পনা নেই। ওদের প্রেমেও এমন কোন জটিলতা ছিল না যে, সেই সময় বিয়ে করাটা জরুরী ছিল।
কিন্তু বড় বোনকেও একই কায়দায় বিয়ে দেওয়ায় মরিয়া হয়ে উঠে মুক্তা !

জীবনে যাকে বিশ্বাস করে হাতটা ধরেছিল, সেই সুমিতকে অনুরোধ করেছিল একটা সাবলেট বাসা খুজেঁ দিতে...
নারীবাদী সুমিত নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করলেও মুক্তাকে নিজের ঘরে আটকাতে চেয়েছিল।
মায়ের অমতে বাবার সাথে বিয়ের পরিকল্পনা করে সুমিত মুক্তাকে জানায়। মুক্তা তখন কোনভাবেই বিয়ে করবে না...

কিন্তু একান্ত ভরসার মানুষ সুমিত যখন জানায় এই সময় বিয়ে না করলে আগামী একবছরের মধ্যে আর বিয়ে করতে পারবে না, তখন মুক্তা নিরুপায় হয়ে বিয়ে করে সুমিতকে।

খান্ডারনী শ্বাশুড়ীর অত্যাচারে দাঁতে দাঁত চেপে মুক্তা সুমিতের সাথে জীবন পার করতে থাকে।

শ্বাশুড়ী ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে, মুক্তা একটা বেশ্যা, তার
আর বেশ্যা বলেই সে (মুক্তা) তার ছেলেকে কব্জা করেছে।
শ্বাশুড়ির এহেন কথাবার্তায় মুক্তা নিজেকে ইদানিং বেশ্যা ভাবতে শুরু করেছে !
মুক্তার কথা হচ্ছে সে তার স্বামী সুমিতের সাথে আছে একজন পতিতা হিসেবে, স্ত্রী হিসেবে নয়। যে আসলেই পতিত। যে এখন আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা একজন বেশ্যা।
আর যেই সুমিতকে ভরসা করতে বাধ্য হয়েছিল, সেই সুমিত প্রতিনিয়ত অফিস থেকে বাসায় ফিরে মুক্তার নামে শ্বাশুড়ির কান পড়া শুনতে শুনতে এখন মুক্তাকেও যথেষ্ট পরিমাণেই চাপের মধ্যে রাখতে শুরু করেছে...

মাঝে মাঝে জানালার গ্রীল ধরে মুক্তা ভাবে...বিয়েটাকে খুব জরুরী মনে না করেও কেন সে বিয়েতে রাজি হয়েছিল !?

রবিবার, ২১ জুলাই, ২০১৩

কবিতা : সম্পর্ক

তোমার সাথে আমার পার্থক্যটা এখানেই...
তুমি আঘাত করতে পারো
আমি নই ।
আমি সম্পর্কের সম্মান রাখতে পারি।
সম্পর্কে যদি সম্মাণই না থাকলো
তবে কিসের সম্পর্ক?!
তুমি কি এতোটাই আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠলে যে,
আমি তোমাকে ছেড়ে যাব না?!
আমি তো আসলেই তোমাকে ছেড়ে যেতে পারবো না।
কি এক অমোঘ টানে, জালে আমি আটকা পড়েছি :(
কতোবার যে ছুটতে চেয়েছি :(
তোমার বাঁধার ক্ষমতা অসীম :(

অনুগল্প : চেনা-অচেনা

ফোনটা নিয়ে অনেকক্ষণ থেকেই উসখুশ করছে ...
কতোদিন রিশাদের সাথে কথা হয় না নিপার !
ভারী, অস্থির কন্ঠটা শুনতে নিপাই অস্থির হয়ে যাচ্ছে...

এমন কখনো হয় নি যে, দু'জন পুরো সময়টা ধরেই ঠান্ডা মাথায় কথা বলেছে...বরং দেখা গেছে যতক্ষণ কথা বলতো তার মধ্যে অনেক বেশি সময়ই রাশেদ খুব কঠিন কঠিন কথা শোনাতো নিপাকে...
কঠিন কথা শুনতে শুনতে একরকম মোহগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছিল !
রিশাদ ফোন করলে নিপা ফোনটা রিসিভ করে অপরপ্রান্তে চুপ করে থাকতো ।
তারপর ওই পাশ থেকে রিশাদের ধমক খেয়ে নিপার মুখ থেকে কথা বেরুতো ...
শুধু ঝারি খেতেই নিপা অনেক সময় রিশাদকে খেপাতো ....

ভাবতে ভাবতে নিপার চোখ ভরে যায় পানি তে ...

সমাজে বলার মতো আহামরি কোন সম্পর্কই নেই দু'জনের মধ্যে । শুধুই দু'জনে দু'জনার শুভাকাঙ্খি ।
কখনো কোন রকম রোমান্টিকতার নায়ে তারা চড়ে বসেনি।

কিন্তু তারপরও কেমন অদ্ভুত এক মোহগ্রস্থতা !

রিশাদের ফোন খুব কম সময়ই খোলা পেয়েছে নিপা। কিন্তু আজ যেন ভুতে পেয়েছে ওকে ...
নাম্বারটা ডায়াল করে তাকিয়ে থাকে ফোনের দিকে...
যদি ফোন খোলা পায়ও তবুও কথা বলতে পারবে না...
ওর আসলে বলার কিছুই নেই।
নাহ, ফোন বরাবরের মতোই ...

এবার টেক্সট পাঠালো ...
জানে রিশাদ ফোন বন্ধ রাখলেও ও নিজেও অস্থির চিত্তের ...কোন এক ফাঁকে ঠিকই ফোনটা চালু করবে আর তখন ওর মেসেজটা ঠিকই ডেলিভারড হবে...

আজকাল তোমাকে মেসেজ দিতেও কেমন অস্বস্তি হয় !
কতো দূরের অচেনা হয়ে গেছ ...!

শনিবার, ২০ জুলাই, ২০১৩

♣ ধর্ষণ...! সামাধান কি আসলেই আছে?! ♣

একজন নারী ধর্ষিত হবার প্রথমেই তার মাথায় ধর্ষকের শাস্তির চিন্তা আসে না । হয়তো সে ধর্ষিতা হবার পরপর বার বার করে গোছল করে তার শরীর থেকে অসহ্য ঘৃণা সরিয়ে ফেলতে চায় ! সে তার সব থেকে কাছের মানুষটির/মানুষগুলোর সান্নিধ্য চায় সেই সময়ে । তারপর হয়তো সে চায় ধর্ষকের শাস্তি হোক। কিন্তু ততক্ষণে ধর্ষিতার শরীর থেকে ধর্ষনের আলামত অনেকটাই মুছে যায় । আর আলামত মুছে যাওয়ার কারণে এবং সমাজ জানাজানি, লোক কানাকানি, ধর্ষকের পক্ষ থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারা চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্ষনের মামলা আর আগাতে পারে না। ধর্ষক খালাস পেয়ে যায় ।

একটি উদাহরণ দেয়া যাক-
খুবই সাধারণ একজন চাকুরে মুরাদ এর বড়লোক বন্ধুটি বড়ই রসময় সব রঙ্গতামাশা করতে ওস্তাদ তার বন্ধুপত্নীর সঙ্গে এবং সেটা্ও মুরাদ এর অনুপস্থিতিতে বড্ড অসময়ে, যখন মুরাদ বাড়ির বাইরে থাকে অর্থাঁৎ অফিসে।
খুবই সাহায্যকারী মনোভাবাপন্ন বন্ধু শামীমের এই নিয়মিতই অসময়ে উপস্থিতি বন্ধু মুরাদকে দুশ্চিন্তায় না ফেললেও ভাবিয়ে তোলে কমবয়সী স্ত্রী পুস্পকে।

একসময় কোন এক দুপুরের পর পর সময়ে শামীমের উপস্থিতি এবং সন্দেজনক আচরণ এবং তারপরই পুষ্পকে একা বাড়িতে পেয়ে আক্রমণের ধকল সামলাতে না পেরেপেুষ্প অজ্ঞান হয়ে যায় ।
মুরাদের কাছে দেবতারুপী বন্ধুই হায়েনা হয়ে ঝাপিয়ে পরে অজ্ঞান পুষ্পকে ছিঁবড়ে খেতে !

আইন যুক্তি ছাড়া, প্রমাণ ছাড়া আবেগ দিয়ে এগিয়ে যায় না । থেমে যায় ধর্ষিতার নিরব যন্ত্রনাকে অন্ধকারে রেখে।
বাস্তবে অন্তত তাই হয়...

কিন্তু কখনো কখনো নাটক, সিনেমাতে দর্শককে সচেতন করতে এগিয়ে আসে কোন কোন কাহিনীকার। সেখানে যোগ হয় যখন পুরনো কেস ঘেটে দেখা যায় শামীম নামের মানুষরূপী হায়েনারা এর আগেও একই ঘটনা ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে বেঁচে যেয়ে ঘুরে বেড়ায় বুক ফুলিয়ে, তখন কোন একজন উকিলের বক্তব্যের মারপ্যাচে আর ভবিষ্যতে এই হায়েনার দ্বারা আরো নারী ধর্ষিত হতে পারে...এই আশংকা ঢুকিয়ে দেয় প্রধান বিচারকের মনেও । তখন বিচারক রায় দিয়ে সাজা দেন এই সব শামীমদের।
সমাজকে, বিবেককে সচেতন করতে তেমনই একটি সিনেমা "প্রিয়তমেষু"

ঘটনাগুলো আরো চাপা পরে যায় যখন ধর্ষক খুব পরিচিত কাছের কেউ হয়। হতে পারে তার সহোদরার স্বামী, যে কিনা ধর্ষিতার "দুলাভাই" বা তার প্রিয় খালার স্বামী "খালু" অথবা তার অনেক পছন্দের ফুফুর স্বামী "ফুফা" হয় সেক্ষেত্রে  ধর্ষিতা নিজেই হয়তো ধর্ষকের কথা ভেবে নয় বরং ধর্ষকের সাথে সম্পৃক্ত তার আপন মানুষদের হতে পারে বোন, খালা,ফুফু বা আর কেউ নিকটাত্নীয়ের অসম্মান, কষ্টের কথা ভেবে বিষাক্ত যন্ত্রণাকে পাথর চাপা দেয়।

ধর্ষক যেহেতু জানে আইন তার কিছুই করতে পারবে না, পরবর্তীতে আরো কেউ একই পন্থায় ধর্ষিতা হয় এবং আলামত মুছে যায় । এভাবেই ধর্ষকরা টিকে থাকে আর সমাজকে নোংরা দূর্গন্ধময় করে যাচ্ছে নিরবে। আমাদের নাক দূর্গন্ধ সহ্য হওয়া নাক। তাই আমাদের অসহ্য লাগে না । সাময়িক ক্রোধ প্রশমিত হয়ে যায় সহসাই।

কয়েকদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে, ব্লগে পোস্ট দিয়ে, শাহবাগে বা এমনি কোন রাজপথে মানববন্ধন করে তারপর ভুলে যাই।

কয়েকদিন পর নতুন আরেক ধর্ষিতার আর্তচিৎকার আমাদের কর্ণগহ্বরে প্রবেশ করলে শুরু হয়ে যায় আমাদের ক্রোধাগ্নীর আবার সেই চক্র ।
এভাবেই চলতে থাকে চক্রাকারে...সেই সাথে থেমে থাকে না ধর্ষকেরও ছিঁবড়ে খাওয়ার ভোজন পর্ব .............................. 

বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই ব্লগার জালিস মাহমুদকে তার **কিছু বাংলা মুভি** পার্ট ~ ১ পোস্টটির জন্যে যা আমাকে এই পোস্টটি তৈরী করতে সাহায্য করেছে।

বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০১৩

প্রিয়তমেষু

প্রিয়তমেষু,
লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট বলে একটা কথা আছে না?! ওটা আমি আগে কখনো সেভাবে বিশ্বাস করতাম না। কিন্তু পাড়াত ছোট ভাইয়ের দেয়া ঠিকানায় যেয়ে তোমাকে দেখে প্রথমে বুঝতেই পারি নি, এ আমার কার সাথে পরিচয় হলো। দিন নেই, রাত নেই শুধুই তোমার কথা ভেবেছি। সম্পর্কটা তোমার সাথে আমার আজকে দেখলাম দুই বছর হতে চলল। অনেক ভালোবাসা যেমন পেয়েছি, অনেক সম্মানও যেমন পেয়েছি, তেমনি অনেক অবহেলা, অনেক অবজ্ঞা, অনেক অসম্মানও পেয়েছি। বিশ্বাস করো, আমার এই জীবনে এতো অসম্মান আমি এর আগে আর কোথাও থেকে পাইনি ! কতোদিন ভেবেছি এতো অসম্মানের, এতো অবজ্ঞার এই সম্পর্ক আর রাখবো না। কতোবার তোমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। সে সময়গুলোতে লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাকে দেখতাম! আমি সত্যিই পারিনি তোমাকে ছেড়ে, তোমাকে ভুলে একটাদিনও থাকতে। কতো পাড়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারছি কোথায় বল। সম্পর্কে জড়িয়ে রাখার ক্ষমতা তোমার সত্যিই অদ্ভুত! কি যাদু জানো বলতো?!

আমাকে বিদ্যার জাহাজ বানাতে তুমি যেন উঠে পড়ে লেগেছ! এতো পড়ার সীমাহীন সিলেবাস তুমি আমায় ধরিয়ে দিয়েছো যে, এখন নিজের পড়া তৈরীর পাশাপাশি সেই বিশাল সিলেবাসও আমায় হজম করতে হচ্ছে ! আমার কষ্ট হয় না বুঝি!

রাত জাগলে আমার চেহারা নষ্ট হয়ে যাবে! সেই নিয়ে তোমার সে কি দুশ্চিন্তা! কতো মিষ্টি করে তুমি আমায় বোঝালে যেন তোমার সাথে কথা বলতে বলতে বেশি রাত করে না ফেলি।
জানো, কিছুদিন সত্যিই আমি তোমার কথা মেনে চলেছি। এখনও কেউ রাত জাগা নিয়ে কথা বললে তোমার কথাই প্রথম মনে হয়।

মাঝে মাঝে তোমার রূঢ় আচরণে আমার যে কি প্রচন্ড কষ্ট হয়! তুমি বুঝতে পারো না!? আমি তোমার গত কয়েক বারের দেয়া কষ্টগুলো ভুলতে পারিনি! কতোটা অভিমান করলে তুমি বুঝতে পারবে তাই ভাবছি!
আমার অভিমানগুলো কি সত্যিই বুঝতে পারো?!

আমি মনে হয়, তোমাকে ছেড়ে এই ইহজনমে আর কোথায়ও যেতে পারবো না
ইতি,
তোমারই আরজুপনি

বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০১৩

কবিতা : অক্সিজেন

কোন এক শেষ বিকেলে সে আমার হাতটা ধরে বলেছিল ...
আমার সাথে থাকবা না?

হ্যাঁ, আমি কথা দেই নি।
কিন্তু কথাটা না দিয়েও রেখেছিলাম।
সেইই বরং কথা রাখতে পারে নি।
সাথেই আছি...
আমি ছেড়ে যেতে পারি নি।
সেই হারিয়ে গেছে..
হারিয়ে গিয়ে নিজেই হেরে বসে আছে !

আমি কিন্তু জিতেই গেছি !
আমি জিতেই আছি !
আজও আমার ভালোবাসার সবটা জুরে সে আছে ।

একটা সময় আবিষ্কার করেছিলাম
আমার শ্বাস কষ্টের রোগ হয়ে যাচ্ছে।
ইনহেলারের প্রয়োজনটা বড্ড বেড়ে গেছে !

হ্যাঁ, ইনহেলার সেই-ই ছিল ।
কিন্তু সে বুঝতে পারে নি,
আমি আমার শ্বাসকষ্টের রোগটা থেকে
নিজেকে সারিয়ে তুলতে পারবো ।

সারিয়ে আমি নিজেকে তুলেছি ঠিকই কিন্তু ...
এখনও আমার অক্সিজেনের ঘাটতি পরে যায়...

অক্সিজেনের ঘাটতি পরে যায় যখন ভাবনায় তুমি এসে ভীড় করো ।

তুমি আমার জীবনে যে অক্সিজেন হয়েই আছো !

লাইসেন্স

বিশাল মোটা মোটা পিলারগুলোকে পাশ কাটিয়ে চার তলার উপর থেকে খুব সফলভাবেই গাড়ি নামাতে পারল রিন্তা।

সিকিউরিটি গার্ড হর্ন শুনেও গেটটা খুলতে দেরী করলো ! গেট পার হতে যেয়ে সাপের মতো ঠান্ডা চোখে একবার গার্ডটাকে দেখে নিল সে।

গেটের বাইরে যখন বেরিয়ে এলো ততক্ষণে বিকেলের পড়ন্তু সূর্য কমলা আলো ছড়াচ্ছে পশ্চিমাকাশে । মিনিটখানেকের জন্যে বাম হাতে স্টিয়ারিংটা ধরে তাকিয়ে থাকল লাইসেন্সটার দিকে। গতকালই পেয়েছে। সাত হাজার টাকা ঘুষও দিতে হয়েছে এর জন্যে ।

রিন্তা কতোদিন কল্পনার সাগরে ভেসেছে যে, প্রচন্ড মন খারাপ থাকা অবস্থায় ধুমধারাক্কা গাড়ি চালিয়ে কোন একটা দেয়ালে সজোরে গাড়ি লাগিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় গাড়িতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকবে। তারপর হুশ ফিরে এলে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করবে বরের বাহু বন্দি অবস্থায় । ছলছল চোখে বর বলবে "কেনো এমন পাগলামি করো রিন্তা?"

ইফতারির এখনো মিনিট ত্রিশেক দেরী আছে। আজকে চাঁদ দেখলে কালকেই ঈদ । বাম ইন্ডিকেটরটা দিয়ে রওনা দিল ক্যান্টমেন্ট-এর উদ্দেশ্যে । ঠিক ক্যান্টনমেন্ট না, ওটা মানিকদির কাছেই মাটিকাটা বলে এলাকাটাকে ।

ওভারপাসটা হওয়াতে টান দিয়ে চলে যাওয়া যায় । ঢাকার রাস্তায় যেখানে রিক্সার পিছে পিছে মেজাজ খিচ মেরে গতি রাখতে হয় ১৫ কিমি, সেখানে নিশ্চিন্তে ৭০কিমি গতি উঠিয়ে চলে যাওয়া যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ।

ইফতারির সময় ঘনিয়ে আসাতেই হোক বা এলাকাটাকে বসতি তুলনামূলকভাবে কম হওয়াতেই হোক রাস্তা দিয়ে হঠাৎ হঠাৎ করে গাড়ি চলছে।
আড়চোখে গতি দেখে নিল, ৮০ তে উঠিয়েছে ! ক্যান্টনমেন্ট থানা পার হয়ে মিরপুর থানায় গিয়ে পড়লো । রাস্তা দিয়ে একটা ছেলে হেঁটে যাচ্ছে। হাতে একটা ঝোলা ব্যাগ। চারদিকে শুনশান নিরবতা।

রিন্তা গতি বাড়িয়ে ১০০ তে উঠিয়ে দিয়ে ছেলেটাকে সাঁই করে একটা ধাক্কা দিয়ে পার হয়ে যেতে যেতে দেখে নিল কেউ দেখলো কি না...নাহ্ রাস্তা ফাঁকা।

ফাঁকা রাস্তা পার হয়ে খুব সহজেই ফিরে এলো বাসায়।
শাওয়ার সেরে ল্যাপটপটা নিয়ে বসলো । হোমপেজে তাকিয়ে আছে। একসময় স্ট্যাটাস দিল ...

"অনেক অপেক্ষার পর লাইসেন্সটা পেয়ে গেলাম শেষ পর্যন্ত..."

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites