অনেকদিন পর বলাকায় গেলাম বাঙলা সিনেমা অনন্ত জলীল অভিনিত ম্যুভি "দ্য স্পীড" দেখতে। সিনেমা শুরুর আগে পর্দা সরে গেল সিনেমা হলের এবং স্বাভাবিক ভাবেই জাতীয় সংগীত মিউজিকে পরিবেশন । কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম প্রায় ৩০% দর্শক সে সময় বসা থেকে উঠার নাম পর্যন্ত করেনি এই কয়েক মিনিট দাড়িয়ে জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শণ করতে।
সিনেমার শুরুই হলো বেশ দারুন সাউন্ডের ইফেক্ট দিয়ে। "দ্য স্পীড" নামটিকে সার্থক করতেই হয়তো।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অনন্ত একজন সৎ দেশপ্রেমিক CIP ।সিনেমার শুরুতেই দেখা গেল বেশ ব্যায়াম করছেন। একজন নায়ক হিসেবে দর্শকদের কাছে যা বেশ আকর্ষণীয় বটে। অনন্ত জলীলকে নিয়ে অনেক মজার মজার কথা এর আগে শুনেছি। শুনে অভিজ্ঞতা তেমন ভালো ছিলো না। কিন্তু অনন্তর এপ্রোচ দেখে বেশ আশার আলো দেখতে পেলাম।
ছোটবেলাতেই বাবা-মা মারা যাওয়ায় বড় ভাইয়ের কাছে বড় হওয়ার পর সন্ত্রাসীদের গুলিতে ভাই-ভাবী নিহত হলে বড় ভাইয়ের ব্যবসার দায়িত্ব নিয়ে অনন্ত তার সততায় সেটাকে AJI Park (অনন্ত জলিল ইন্ডাস্টিয়াল পার্ক) বানাতে সক্ষম হন।

এদিকে বড় ভাইয়ের রেখে যাওয়া একমাত্র কন্যা দৃষ্টি (দীঘি)র সেবায় সারাক্ষণ ব্যস্ত দুই ইয়া মুটকি স্কার্ট, টপস পড়া পরিচারিকা। চাচ্চুর জানের জান বৃষ্টির সাথে চাচ্চুর একটি দারুন গান পরিবেশন হয় এই ফাঁকে। এখানে বলে রাখা ভালো চাচ্চুর আর ভাতিজার সম্পর্ক আর গানের কথা না শুনে কেউ যদি বোবা অভিনয় দেখে তবে অবাক হয়ে ভাববে কি রে, এতো বড় নায়কের সাথে এই পিচ্চি নায়িকা কেমন করে কি?! দীঘির অভিনয় আর এ্যাপ্রোচ তেমনই ছিলো।

কক্সবাজারে হানিমুন করতে গিয়ে শত্রুর গুলিতে আক্রান্ত্ত হয়ে বৃষ্টি যায় মরে। এখানে অবাক হলাম অনন্তর মতো একজন বিজনেস ম্যাগনেটের সিকিউরিটির দূর্বল ব্যবস্থাপনা দেখে।
পরবর্তীতে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে ব্যবসার কাজে মালয়েশিয়া গেলে সেখানে পুত্রজায়া সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে গেলে সেখান থেকে কিডন্যাপড হয় তার স্ত্রী "সন্ধ্যা" আর অনন্ত গুলি খেয়ে মালয়েশিয়ার হসপিটালে। একটু সুস্থ হলে হাসপাতালের বেডেই তাকে একটি সিডি আর একটি ঘরি দিয়ে যাওয়া হয়। সত্যি অবাক হয়ে ভাবছিলাম, কিরে ভাই, গয়নার বাক্সে দিলো সিডি, আবার ঘড়ি দিলো কেন?!
সিডি চালানোর পর বুঝলাম। স্ত্রী সন্ধ্যাকে নিয়ে ওরা একটি বুলেট প্রুফ কাচের গ্যাস চেম্বারে রেখেছে। যেখানে ৫ দিন পর্যন্ত অক্সিজেন থাকবে এবং তারপর অক্সিজেন শেষে কার্বণডাই অক্সাইডের বিষাক্ততায় সেখানেই মারা যাবে। এর একমাত্র খোলার পথ হলো সেই ঘড়িতে কিবরিয়াদের ৫ জনের আই কন্টাক্ট (রেটিনা স্ক্যান করে) দিলেই তবে সেই ঘর খুলবে।

এখানে নানাকে যেমন দেখাচ্ছে, ম্যুভিতে দেখতে সে আরো অনেক বেশিই আকর্ষণীয়। নানা অনেক ভাবে অনন্তকে সহযোগিতা করে একসময় শত্রুদের হাতে জীবন দেয়ার শেষ সময়ে তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে যায় (আহারে বেচারী!)
একে একে চারজন রাশিয়ান রেসলার স্মাদি, আফ্রিকান বক্সার মাইক বোস, মালয়েশিয়ান বক্সার আটন এবং ইতালিয়ান নিনোর আই কন্টাক্ট নিতে সক্ষম হলেও কিবরিয়ার আই কন্টাক্ট নেবার আগেই হার না মানা কিবরিয়া নিজেকে গুলি করে।
ফলে অনন্ত সেই বুলেটপ্রুফ গ্লাস কোন ভাবেই ভাংতে না পেরে শেষ ভরসা গলায় থাকা লকেট কোরানের আশ্রয় নিয়ে আল্লাহকে ডাকার ফলে ভেঙে যায় সেই দেয়াল।
অতঃপর মধুরেন সমাপয়েত।

১. প্রতিটি নারী চরিত্রের পোষাক এবং শরীরের ভঙ্গি ছিলো শালিন এমন কি বোনাস নায়িকা বা গুন্ডা বাহিনীর নারী সবাই।
২. গানগুলো বেশ শ্রুতিমধুর (যদিও মনে নেই একটারও কথা :( )
৩. গানের কোরিয়গ্রাফ বেশ সুন্দর ছিলো।
৪. সাউন্ড সিস্টেম খুবই ভালো লেগেছে। এমনকি মাইক্রোলেভেলেও তারা সাউন্ডের কাজগুলো বেশ সুচারুরুপেই করেছে।
৫. ৪৩৫ এক্সট্রিম আলট্রা প্রাইম লেন্সের ক্যামেরা আর হলিউডে আর বলিউডে ব্যবহৃত ব্যয়বহুল ক্যামেরার কাজ বেশ দারুন ছিলো।
ম্যুভির যেই কাজ গুলো আরো ভালো হতে পারতোঃ
১. অনন্ত জলীলকে নাচে তেমন পারদর্শী নয় বলেই মনে হলো।
২. নায়কের ভয়েস এখনও সিনেমাপোযোগী নয় বলেই মনে হলো, এক্ষেত্রে অন্য কাউকে দিয়ে ডাবিংয়ের কাজটা করানো যেতো।
৩. ইংরেজী বলার ঢংটা এতোবড় ব্যবসায়ী হিসেবে আরো বেশি চৌকোস হতে পারতো।
৪. ডায়লগ গুলোকে টিভিতে বিজ্ঞাপনের মতো মনে হয়েছে।
৫. নায়িকা লন্ডন থেকে কেমন করে PIA প্লেনে এলো? আমিতো জানি লন্ডন থেকে হয় বৃটিশ এয়ারওয়েজ, গালফ এয়ার বা এমিরাটে আসে। কি জানি PIA -র ব্যাপারটা মনে খচখচ করছে।
৬. শেষে আশা কোরানের লকেটটা হাতে নিয়ে আল্লাহকে বলার পর যদি দেখাতো আলমগীর চোখ খুলেছে তবে ওই অংশটুকু বরং আরো বেশি আকর্ষণীয় হতে পারতো যা ধর্মীয় অস্বাভাবিকতা দিয়ে শেষটাতে কিছুটা আকর্ষণ নষ্টই করা হয়েছে বলবো।
কিছু ব্যাপারে মনে হয়েছে রাজনৈতিক চামচামি করা হয়েছে। যেমন দেশে এখন মানুষ খাবারে কষ্ট পায় না। সরকার এ ব্যাপারে বেশ কাজ করছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ , ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে গলা ফাটানো হয়েছে কয়েকবার।
সবশেষে বলবো...সপরিবারে যেয়ে দেখার মতো চমৎকার একটা সম্ভাবনাময় সিনেমা। সব মিলিয়ে ভালো লেগেছে অনেক। অনন্ত জলিলের ভবিষ্যৎ সিনেমা জীবনের সাফল্য কামনা করি।
2 মন্তব্য(গুলি):
রিভিউ হিসেবে দশে দশ।
আবাহনী মাঠের কাছে বছর খানিক ধরেই এই ছবির বিলবোর্ড দেখছিলাম আর তাতেই মনে হয়েছিল বাংলা ফিল্মের প্রচলিত ধারার চেয়ে বেরিয়ে আসার একটা চেষ্টা করা হয়েছে এখানে। রিভিউতে মনে হলো স্পীড এর গল্পটা সেই আবহমানকালের সেই সেট থেকে বেরিয়ে আসি আসি করেও বেরিয়ে আসতে পারেনি যদিও প্রযুক্তির কিছুটা সন্নিবেশ ছিল।
যা হয়েছে তাতেই বা কম কি?
"যা হয়েছে তাই বা কম কি"। ঠিকই বলেছেন।
আমিও তাই মনে করি। অন্তত শুরু তো হয়েছে। অনন্ত জলিলের মধ্যে যেই নার্সিসিজম দেখলাম তাতে মনে হলো উনি অন্তত শুধুই প্রযোজক হতে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে আসেননি। তবে উনি যদি অভিনয় করতেই চান তবে উনাকে আরো অনেক সাধনা করতে হবে।
আমি আশাবাদী।
=====
আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতাও বলবো, আমার এই নতুন ব্লগ স্পটে এসে আমাকে অনুপ্রেরণা দেবার জন্যে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন