বৃহস্পতিবার, ২ মে, ২০১৩

শুভ জন্মদিন জননী। সালাম রইল তোমায়।।


ক্লাস নাইনে পড়ি তখন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের বই পড়া প্রতিযোগিতার ফলাফল কি হয়েছিল জানতে পারিনি বাসার বাড়াবাড়ি রকমের শৃংখলের কারণে। একদিন প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম ডাকালেন তার রুমে। আমিতো ভয়েই অস্থির। না জানি কপালে কি আছে!
যেয়ে দেখি উনার রুমে বসে আছেন বিশ্ব সাহিত্য কেন্দের বই পড়া প্রতিযোগিতার সাথে সম্পৃক্ত দু'জন সিনিয়র । প্রিন্সিপ্যাল ম্যাডাম দেখে হেসে দিলেন, উনাদের হাত থেকে পুরষ্কার হিসেবে নিলাম অনেকগুলো অসাধারণ বই, আসমানী রঙের ফিতা দিয়ে বাঁধাই করা। সেই বইগুলোরই একটা ছিল "একাত্তরের দিনগুলি"। শ্রদ্ধেয় জাহানারা ইমামের সাথে আমার পরিচয় তখন থেকে। আমি ওই বইটা যে কতো বার পড়েছি হিসেবে নেই। সেই থেকে শহীদ রুমীর প্রতি আগ্রহ। প্রথমার প্রকাশিত শহীদ রুমীর চিঠি পড়ে আকুল হয়ে কেঁদেছি। এমন মানুষকে কেন আমরা হারালাম? কোনভাবেই নিজের কাছে এর জবাব পাইনি।

জাহানারা ইমামের জন্ম ১৯২৯ সালের ৩ মে। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায়। রক্ষণশীল বাঙ্গালী মুসলিম পরিবারে জন্ম হয় তার। বাবা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মা সৈয়দা হামিদা বেগম। ১৯৪২ সালে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ পাস করে ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্লাবোর্ন কলেজে। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড করে ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে মাস্টার্স করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কর্মজীবনে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে শিক্ষকতা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটেও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমীর ঘোষণা করলে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসাবে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করা হয়, তিনি হন আহবায়ক। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্র সংগঠন, প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। তার নেতৃত্বেই এই কমিটি ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ গণআদালতের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার সম্পাদন করে। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণআদালতের চেয়ারম্যান শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। তার এই বিচারের পরে দেশব্যাপী এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তার ক্যান্সারের মাত্রা বেড়ে যায়। আমেরিকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

তার আন্দোলনের পথ ধরেই আজকের এই শাহবাগ গনজাগরণ। যেদিন দেখলাম জননী জাহানারা ইমামের ফটো শাহবাগে সত্যিই আবেগে আপ্লুত হয়ে গিয়েছিলাম।

বিশেষ ধন্যবাদঃ ডেভিড, যার কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই লেখা।

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites