বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

♣ তথ্যসূত্র লেখার সহজ পাঠ ♣



আমরা সাধারণ কোন গবেষণা বা প্রতিবেদন তৈরী করার পর এতে ব্যবহৃত তথ্যের উৎস দিতে কার্পণ্য করি বা সঠিক ভাবে দিতে অনেকসময়ই অপারগ থাকি কিভাবে তথ্যসূত্র দিতে হয় তা না জানা থাকার কারণে। তথ্যসূত্র সঠিকভাবে প্রদাণ করার কারণেই বরং উল্লেখিত লেখাটি, গবেষণা বা প্রতিবেদনটি আরো বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠে। নিচে তথ্যসূত্র লিখার কিছু সহজ নিয়ম তুলে ধরা হলো। আশাকরি পাঠকদের কাজে লাগতে পারে তাদের যে কোন তথ্যসমৃদ্ধ লেখাকে নির্ভরযোগ্যকরার ক্ষেত্রে।

তথ্যসূত্র বা তথ্যপঞ্জী হল প্রকাশিত কাজের সংগৃহীত উৎসের তালিকা। কিন্তু থিসিস বা প্রবন্ধে প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত উভয় প্রকার কাজকেই তথ্যপঞ্জীতে সন্নিবেশিত করা হয়। তথ্যপঞ্জী বিভিন্ন প্রকার হতে পারে:

১।. থিসিসের মূল গ্রন্থাংশে, প্রতিবেদনে বা পাদটীকায় যেসব উৎসের উল্লেখ রয়েছে তাদের তালিকা।

২। থিসিসের সাথে সম্পর্কযুক্ত যেসব পুস্তক, পুস্তিকা, সাময়িকী, প্রতিবেদন, প্রবন্ধ ইত্যাদি পাঠ ও পর্যালোচনা করা হয়েছে, সেসব পুরোপুরি প্রাসঙ্গিক না হলেও তাদের তালিকা।

৩।. আরেক ধরনের তথ্যপঞ্জী আছে, এদের বলা হয় টীকাযুক্ত তথ্যপঞ্জী। তথ্যের উৎসের বিষয় ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত টীকা সহ তাদের তালিকা থাকে।

তথ্যপঞ্জী লেখার নিয়ম

ক। পাদটীকা না দিয়ে প্রতিবেদনের শরীরেই উৎস নির্দেশ করা যেতে পারে। যেমন: [দ্র: হাবিব (২০০৬, ৭১)] এভাবে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে আটকাতে হবে। এতে বোঝায় মোঃ আহসান হাবিব ২০০৬-এ প্রকাশিত বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় মিলবে তথ্য বা বিশ্লেষণটি; এবং ওই বই সম্পর্কে সব তথ্য পাওয়া যাবে রচনাপঞ্জীতে।

খ। তথ্যপঞ্জীতে গ্রন্থনাম উল্লেখ করা যেতে পারে বাঁকা ( Italic) যেমনঃ Lewin, K. (1946). Field Theory in Social Science, Harper & Row, New York, NY

গ। প্রবন্ধ, গল্প, কবিতার নাম ছাপা উল্লেখ করা একক উদ্বৃতি চিহ্নের ভেতরে। যেমনঃ Lewin, K.(1946), 'Action Research and minority problems', Journal of Social Issues, Vol. 2 No. 4

ঘ। গ্রন্থকারের নাম, প্রথমে শেষ নাম বা পারিবারিক নাম তারপর কমা দিয়ে প্রথম বা প্রদত্ত নাম তারপর কমা। যেমনঃ Bessey, M., বাঙালী গ্রন্থকারের বেলায় পুরোনাম লিখে কমা। যেমনঃ ডা: গোলাম মোর্শেদ

ঙ। কাজের শিরোনাম লিখে তার নিচে দাগ দেয়া , তারপর কমা। যেমনঃ উচ্চশিক্ষিত দম্পতিদের মধ্যে সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রাধান্য যাচাই,

চ। প্রকাশের স্থান এরপর কোলন। যেমনঃ ঢাকাঃ

ছ। প্রকাশনা সংস্থার নাম, এরপর কমা। যেমনঃ জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশণ,

জ। প্রকাশের সন এরপর দাড়িঁ বা কমা, প্রয়োজনেমোট পৃষ্ঠা সংখ্যা, তারপর দাঁড়ি। যেমনঃ ২০০৯, ৬৪।


রেফারেন্সিং-এর বেসিক স্টাইল আছে কয়েকটা। সবচেয়ে বেশি ইউজ হয় APA, MLA, Chicago, AMA, Harvard referencing... এগুলোর মধ্যেও মডিফিকেশন হয়, পয়লা দুইটা করে আমেরিকার একটা ভার্সিটি, নামটা এখন খেয়াল নেই  এপিএ এখন ছয় নাম্বার ভার্সন চলছে।

সাধারণত, কমন ইউজের ফিল্ড (মানে বেশি ইউজ হয়)

APA: psychology, education, and other social sciences.
MLA: literature, arts, and humanities.
AMA: medicine, health, and biological sciences.
Chicago: used with all subjects in the "real world" by books, magazines, newspapers, and other non-scholarly publications.

কোনটা ইউজ করা হবে সেটা ডিপেন্ড করে জার্নাল বা ভার্সিটির রুলসের উপর। জার্নালগুলো স্পেসিফাই করে দেয় কোনটা ইউজ করতে হবে। আবার ডেরাইভড স্টাইলও আছে অনেক, ওগুলাও করতে হয় কখনো কখনো।

কয়েকটা এক্সাম্পল দেওয়া হলো উপরের চারটা স্টাইলের শুধু জার্নাল আর্টিকেলের জন্য (বই/কনফারেন্স প্রসিডিংস/রিপোর্ট.....সবকয়টার আলাদা সিসটেম, তাই উল্লেখ করা হলো না)

APA
Hodges, F. M. (2003). The promised planet: Alliances and struggles of the gerontocracy in American television science fiction of the 1960s. The Aging Male, 6, 175-182.

MLA:
Hodges, F. M. "The Promised Planet: Alliances and Struggles of the
Gerontocracy in American Television Science Fiction of the 1960s." Aging Male 6 (2003): 175-82.

Chicago:
Hodges, F. M. 2003. The promised planet: Alliances and struggles of the gerontocracy in American television science fiction of the 1960s. The Aging Male 6:175-182.

AMA:
Hodges, F. M. . The promised planet: Alliances and struggles of the gerontocracy in American television science fiction of the 1960s. The Aging Male. 2003; 6:175-182.


বাংলাদেশের ভার্সিটিগুলো রেফারেন্সিং-এর জন্য সাধারণত কোন কম্পোলসারি রুলস বেঁধে দেয় না, ইচ্ছা মত করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন একটাই করা হয়। এমনিতে খালি চোখে আমার কাছে মনে হয়েছে জার্নালগুলোতে এপিএ বেশি ইউজ হয়, যদিও হার্ভার্ড আর শিকাগোর ইউজ বাড়ছে ইদানিং।

বেশ কিছু সাইট আছে, যেখানে ফ্রিতে রেফারেন্সিং-এর কাজ করে দেয় পেপারের লিংক দিলে (ধরা যাক ইজি বিব দেখা যেতে পারে এমএস ওয়ার্ডের অপশনটাও বেশ, ল্যাটেক্স পারিনা আমি ঐটা থাকলে তো কথাই নাই:) তবে এন্ডনোটের উপর কিছু নাই ।



রেফারেন্সিং এর বিষয় এলে শুধু রেফারেন্স সেকশানে কিভাবে লিখতে হবে তা উল্লেখ না করে "ইন টেক্সট" সাইটেশান সম্পর্কেও লেখা উচিত।
আবার রেফারেন্সে কতজন অথরের নাম আসবে সেই বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ।

ইনটেক্সট সাইটেশনঃ

ধরা যাক, ম্যানুস্ক্রিপ্টের ভেতরে অ্যজমা সম্পর্কে একটা তথ্য দেওয়া হলো।
Asthma affects over 5-10% of population in industrialized countries.

এই ইনফরমেশনটার তথ্যসূত্র টেক্সটের ভেতর বিভিন্নভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে। কিভাবে উল্লেখ করা হবে তা নির্ভর করবে জার্নাল কোন ফরমেটে চাইছে।

সাধারণত জার্নালগুলো হয় এলফাবেটিকাল অর্ডারে রেফারেন্সিং করে নয়ত নাম্বারে (সহজ বাংলায়)।
উপরে যে তথ্যটা দেয়া হয়েছে সেটির পূর্ন তথ্যসূত্র হচ্ছে-
Chang RK, Guo X, Burnside B, Couch R. Fast-dissolving tablets. Pharm Technol 2000;24:52-8.

অর্থাৎ চারজন অথর, ফাস্ট ডিসলভিং ট্যাবলেট শিরোণামে একটি আর্টিকেল পাবলিশ করেছেন ২০০০ সালে ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি নামক জার্নালের ভলিউম ২৪এ। আর্টিকেলটি পাওয়া যাবে ৫২ নাম্বার পৃষ্ঠায়।
এখন যদি টেক্সটের ভিতর নাম্বারিং সিস্টেমে সাইট করতে চাওয়া হয় তবে নিচের মত হবে-

Asthma affects over 5-10% of population in industrialized countries (1).

এখন রেফারেন্স সেকশানে কেউ ১ খুঁজলেই তথ্যসূত্র পেয়ে যাবে। উল্লেখ্য জার্নালভেদে এই "(1)" লেখাটাও ভিন্ন হতে পারে, হতে পারে [1]। 1 আবার হয়ত অনেক জার্নালে সুপারস্ক্রিপ্ট করে দিতে হতে পারে।

আবার যদি এমন হয় আপনি একই তথ্য দু'টি বা তার অধিক সূত্র থেকে নিয়েছেন তবে লিখতে হবে এভাবে (1,2)। [1,2] হতে পারে, (1),(2) বা [1],[2] বা এগুলোর সুপারস্ক্রিপ্ট হতে পারে।

এলফাবেটিকাল অর্ডারে চাইলে প্রথম অথরের নামের শেষ অংশ লিখে et al., সাল লিখতে হবে। অর্থাৎ রেফারেন্সটা হবে এমন-

Asthma affects over 5-10% of population in industrialized countries (Chang et al., 2000).

এর মানে হচ্ছে জনাব চ্যাং এবং তার সহকর্মিরা গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশ করেছেন। এই রেফারেন্সে লক্ষ করার মত কিছু বিষয় আছে। ধরা যাক উপরে যে আর্টিকেলের কথা বললাম ওটায় অথর সংখ্যা চার। যদি ৪ না হয়ে ১ জন অথর হতেন অর্থাৎ ফুল রেফারেন্স যদি এমন হত-

Chang RK. Fast-dissolving tablets. Pharm Technol 2000;24:52-8.

তাহলে ইনটেক্সট এলফাবেটিকাল সাইটেশন হত (Chang, 2000)

যদি দুইজন অথর থাকতেন, যেমন ধরা যাক-

Chang RK, Guo X. Fast-dissolving tablets. Pharm Technol 2000;24:52-8.

তাহলে হত (Chang and Guo, 2000)।

যখনই অথর দুইএর বেশি তখনই (et al., ইয়ার)

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো একাডেমিক জার্নাল পাবলিকেশনের ক্ষেত্রে প্রতিটি জার্নাল কিভাবে রেফারেন্সিং করতে হবে তা বিস্তারিত জানিয়ে দেয়। এবং ঐ নির্দিষ্ট ফরমেটই ব্যবহার করতে হবে।

এবার আসা যাক পারসোনাল কমিউনিকেশনকে কিভাবে রেফার করা যায়।

পারসোনাল কমিউনিকেশনঃ

পারসোনাল কমিউনিকেশন বলতে বোঝাবে ইমেইল, চিঠি ইত্যাদির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহকে। আবার এমন হতে পারে কোন একটা বিষয়ে ঐ বিষয়ের কোন এক্সপার্টের ইন্টারভিউ নেওয়া হলো। ওটাও পারসোনাল কমিউনিকেশন। সাধারণত এ ধরণের রেফারেন্স হাইলি অথেনটিকেটেড না হলে গ্রহনযোগ্য হয়না।

যতোদূর জানা যায় এসব ক্ষেত্রে রেফারেন্স সেকশানে আলাদা করে রেফারেন্স লিখতে হয়না । শুধু টেক্সটের অর্থাৎ ম্যানুস্ক্রিপ্টের ভেতর সাইট করলেই হয়।

যেমন ধরা যাক  Mohamaad Abu Ali নামক একজনার মেইল থেকে কোন তথ্য দিতে চাওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে মুল টেক্সটে উল্লেখ করতে হবে (Ali MA, personal communication, October 9, 2012)।
আর যদি কোন জার্নাল বলে দেয় পারসোনাল কমিউনিকেশন রেফারেন্স সেকশানে উল্লেখ করতে হবে তবে ইন টেক্সট হবে (Ali, 2012)।

রেফারেন্সে গিয়ে পারসোনাল কমিউনিকেশন ভায়া ইমেইল/লেটার/ইন্টারভিউ ডেটেড কত তা উল্লেখ করতে হবে।



লেখাটিকে তথ্য সমৃদ্ধ করতে বিশেষ কৃতজ্ঞতা রইলো সামহোয়্যারইন ব্লগের ব্লগার কালীদাস এবং ব্লগার জীবনানন্দের ছায়া। 

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites