মঙ্গলবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

লাল ডায়েরি

ইদানিং কেমন যেনো...অনেকদিন ধরেই ডায়েরির পাতাগুলো অভিমানে মুখ গুঁজে থাকে। লেখা হয়না, রাখা হয়না ওদের বুকে আমার দৈনন্দিন জীবনের স্মৃতিচিহ্ন। বাসায় ফিরেই টিভির সামনে বসে শুধু দগ্ধ হওয়া মানুষগুলোকে দেখি...
ছাপোষা এই আমার কীইবা করার আছে ?
২১ জানুয়ারি ২০১৫


শুধু অফিস আর বাসা চলছে। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছি না। ওদের নিয়ে কোথাও যে বেরুবো তার উপায় নেই এই রাজনৈতিক অস্থিরতায় ।
২৫ জানুয়ারি ২০১৫

 বড় আপা দেশে আসছেন বেশ অনেকগুলো বছর পর। আপাকে এয়ারপোর্ট থেকে আমিই যাব রিসিভ করতে।
২৭ জানুয়ারি ২০১৫

  মেঝো আপা ফোন করে জানালো আম্মা উনার মোবাইল আবার হারিয়েছেন । মোটামুটি প্রতি ছয় মাস অন্তর আম্মা মোবাইল হারান আর আমি ল্যান্ড সেটের ভরসা না করে বড় ভাই-বোন সবার বকুনি উপেক্ষা করে উনাকে মোবাইল ফোন কিনে দেই ।
দেশের কথা মাথায় তুলে আম্মার ভাড়াটিয়াকে ফোন করে আম্মাকে চাইলাম।
আমি জানি আম্মা মোবাইল হারালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারণ একটাই...দূরে থাকা ছেলে-মেয়েগুলোর খোঁজ নিতে পারবেন না যখন ইচ্ছে তখন। বাপের বাড়িতে অতি আদরে বড় হওয়া আমার আম্মাজান এমনিই...মোবাইল হারালে দোকানে গিয়ে চট করে একটা সেট কিনে ফেলবেন তা করবেন না...মোবাইল হারানোর শোকেই উনি শয্যাশায়ী হবেন !
আম্মার কাছ থেকে কথা নিলাম এই বলে যে আমি আগামী সপ্তাহেই এসে উনাকে ফোন সেট কিনে দিব। কাজেই উনি যেনো কোনরকমের মন খারাপ না করেন।
২৯ জানুয়ারি ২০১৫

 বড় আপার দেশে আসার দিন ঘনিয়ে আসছে! আমি কায়মনোবাক্যে দোয়া করছি হরতাল-অবরোধ যেনো না থাকে! নইলে আপাকে নিয়ে বাড়ি যাবো কেমন করে ?
প্রাইভেট কারে হবে না। তাই মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা আগেভাগেই করে রাখলাম।
৩১ জানুয়ারি ২০১৫

  আজকে আম্মার জন্যে একটা সেট কিনলাম। এই প্রথমবার সিমফনি সেট কিনলাম। ৬২০০ টাকা দিয়ে ট্যাব কিনলাম। হেসেই বাঁচিনা। এই টাকায় ট্যাব ! তবে এতো বড় সেট আম্মা চাইলেও হারাতে পারবেন না।...বড় সাইজের হওয়াতে আম্মা হয়তো বকা দিতে পারেন ।
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

 আপাকে বাড়ি রেখে এসে বইমেলায় যাবো । অস্থির লাগছে... আজকে বুকটা কেমন যেনো দুরু দুরু করছে । যদি আর ফিরতে না পারি ! বাচ্চাদুটোর জন্যে বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠছে ।
২ ফেব্রুয়ারি

এয়ারপোর্টে আপার জন্যে অপেক্ষা করছি ! এতো সকালে শীত শরীরের ভেতরের অস্থি মজ্জাও কাঁপিয়ে দিচ্ছে ! EK582-র ল্যান্ড করার কথা ৮:৮ এ করেছে ৮:৪০ এ। যাইহোক ব্যাপার না, এসেছেতো । আকাশে হারিয়ে যায় নি এতেই শুকরিয়া । এই কয়দিনে বেশ ঘনঘন ডায়েরি লিখলাম। ডায়েরিটাকে ইদানিং বুকের কাছে আগলে রাখতে ইচ্ছে করে । কোন এক শেষ বিকেলে পরম আরাধ্য একজন দিয়েছিলো । এখন সে ...থাক তাঁর কথা- কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চায় !
------------------
ডায়েরিটা পেয়েছি বার্ণ ইউনিটে আনা এক রোগীর পিঠে আটকানো বেশিরভাগ পুড়ে যাওয়া এক ব্যাগের ফোকরে । যার বড়বোন চিৎকার করে কাঁদছিলেন এই বলে যে, এতোদিন পরে উনি দেশে কেন এলেন ???

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites