নিতার
সাথে ইমন এর সম্পর্কটা সূঁতোয় ঝুলছিল। ইমন আসলে কী চাচ্ছিল নিতা ঠিক বুঝতে
পারছিল না। সম্পর্কটা প্রেমের ছিল না। দুই পরিবারের দুই বিবাহিত
মানুষ...যুক্তির খাতিরে প্রেম চলে না। খুব বাস্তববাদী দু'জনের সম্পর্ক ছিল
ভরসার, বিশ্বাসের । ছিল কাছে গিয়ে বুক ভরে অক্সিজেন নেবার মতো।
ইগো মানুষকে যা নয় তাই ভাবতে শেখায় । অধিকারবোধের প্রকাশকে অসম্মান করা ভাবতে শেখায় । আর নিজে অসম্মানিত হচ্ছে ভাবতে কারোই ভালো লাগে না। ইমন-এরও ইগোর সমস্যা বেড়ে যাচ্ছিল। নিতা যতটা আপন ভেবে ইমনের সাথে তার ভাবের দুয়ার খুলে কথা বলতো এর অনেক কথাই ইমন প্রচণ্ড নঞর্থকভাবে নিয়ে সরে যেতে লাগলো নিতার কাছ থেকে...ছেলে-মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় না...কথাটা খুব প্রচলিত...।
আমার জীবনে তোমার কোন অবস্থান নেই... ইমনের কাছ থেকে এই কথা শোনার পর নিতার স্বাভাবিকভাবেই মনের ভেতর প্রশ্ন জেগে উঠলো...বন্ধুত্ব তাহলে কী ?
ইমনের সাথে খুব অদ্ভুতভাবে নিতার যোগাযোগটা ছিল...
কিন্তু দিনের পর দিন ডিপ্রেসড নিতা নিজেও বুঝতে পারেনি সে ভেতরে ভেতরে কতোটা ক্ষয়ে যাচ্ছে !
বেশ কিছুদিন ধরে নিতার ঊরু থেকে একপায়ের পেছনের দিকে ব্যাথা। থামার কোন লক্ষণ নেই...
অবশেষে যখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হল বেশ কিছুক্ষণ ডাক্তার কথা বললেন, কিছু টেস্ট দিলেন, কাউন্সেলিং করলেন এবং অন্যান্য ঔষুধের সাথে Perikolও দিলেন ।
নিতা জানে পারকিনসন রোগ ৫০/৬০ বছর বয়সে সাধারণত হয়...তবে তাকে এই ঔষুধ কেন ? ৫০/৬০ এ পৌঁছুতেতো নিতার এখনও ঢের দেরী !
নিতার সাথে আজই কথা হলো...ওকে ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল ! অদ্ভুতরকমের শান্ত মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই মনের ভেতরে কী ঝড়ের তাণ্ডব চলছে !
জীবনে কিছু মানুষ আসে... হৃদয় মন্দিরে যারা এতোটাই আপন হয়ে উঠে যে হাজার বছর ধরে দূর, বহুদূরে বাস করলেও, চোখের আড়াল হলেও যাদের অবস্থান নষ্ট হয়ে যায় না । সেই জায়গাও কেউ দখল করে নিতে পারে না শত চেষ্টাতেও...!
নিতার খোঁজ নিতে ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। কম্বল জড়িয়ে কুণ্ডলি করে শুয়ে আছে।
সারাদিন কিছু খেতে পারে নি। খেলেই বমি হচ্ছে । এতো শক্ত ধাঁচের মেয়ে কতোদিন আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছে অথচ আজ নিজেই চোখের সামনে ক্ষয়ে যাচ্ছে।
জিজ্ঞেস করেছিলাম পাগলামি করছে কেন?
বললো, মরে গেলে যেন ক্ষমা করে দেই ।
এমন নিষ্ঠুর কৌতুক শোনার আশা করিনি ।
রাগ করে উঠে আসতে নিলাম। ও দূর্বল হাতে আমার হাতটি ধরে বললো, "নাসরিন, এতো জীবন থেকে নেয়া ! আর জীবন বড্ড নিষ্ঠুরই !"
ও চেষ্টা করেও নিজেকে ইমন- এর ভাবনা থেকে বের করতে পারছে না।
আসলে ইমনের ভাবনা থেকে ও নিজেই বেরিয়ে আসতে চাইছে না।
বড় ধরণের মানসিক বিপর্যয়ে মানুষের নানান রকমের শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয় । বুঝতে পারছি ও শারীরিক যন্ত্রণা থেকে নিজের মুক্তির পথ বেছে নিয়েছে।
কিছু জরুরী শপিং করতে গিয়ে নিতার জন্যে একটা টুকটুকে লাল লিপস্টিক কিনলাম।
ওর সাজগোজের খুব অল্প যে কয়টা জিনিস আছে তার মধ্যে লাল লিপস্টিক অন্যতম।
যে মেয়েকে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঠোটে হালকা লিপস্টিকও লাগাতে দেখিনি তাকে কিছুদিন আগ পর্যন্তও দেখেছি লাল লিপস্টিকে ঠোট রাঙিয়ে রাখতে ।
হাত ভরে লাল রেশমী চুড়ি পরে ঘুড়ে বেড়াতে।
কারণ আর কিছুই নয়...ইমন !
লাল লিপস্টিক, লাল চুড়ি ইমনের খুব পছন্দের বলে এখন সেসবও ওর পছন্দের তালিকায় চলে এসেছে।
নিতার ধারণা ওর জীবনটাকে ইমনই রঙিন করে দিয়েছিল !
ছোটবেলা থেকে বাবা নেই...ভাইয়ের শাসনে বেড়ে উঠা নিতার ইমনই পরম ভরসার জায়গা, যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।
এতো ভালোবাসতে কেউ পারে তা ইমন ওর জীবনে না এলে নাকি ও জানতেই পারতো না !
যেহেতু চেয়ারে একটানা বসে থাকতে পারে না তাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইলে পড়া তৈরী করছিল ।
লিপস্টিকটা যখন ওর হাতে দিলাম ও ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো । কয়দিন ধরে কিছু খেতে না পারায় চেহারাটা প্রচণ্ড ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ঠোটগুলো চৈত্রের ফাটা মাটির মতো হয়ে গেছে...
ওর সামনে বেশিক্ষণ থাকতেও অস্বস্তি হয়...
নিতার পারকিনসন হয়নি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিতার হাঁটা দেখেই বলে দিলেন। সেই সাথে Perikol ও খেতে নিষেধ করে দিলেন।
এবার শুরু হলো চিকিৎসার আরেক ধাপ !
আনিতা চৌধুরী, একটি কলেজের জাদরেল প্রিন্সিপ্যাল। স্টুডেন্টদের কাউন্সেলিংটা নিজেই করেন।
অথচ এখন নিজেকেই হারিয়ে খুঁজছেন !
ইগো মানুষকে যা নয় তাই ভাবতে শেখায় । অধিকারবোধের প্রকাশকে অসম্মান করা ভাবতে শেখায় । আর নিজে অসম্মানিত হচ্ছে ভাবতে কারোই ভালো লাগে না। ইমন-এরও ইগোর সমস্যা বেড়ে যাচ্ছিল। নিতা যতটা আপন ভেবে ইমনের সাথে তার ভাবের দুয়ার খুলে কথা বলতো এর অনেক কথাই ইমন প্রচণ্ড নঞর্থকভাবে নিয়ে সরে যেতে লাগলো নিতার কাছ থেকে...ছেলে-মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় না...কথাটা খুব প্রচলিত...।
আমার জীবনে তোমার কোন অবস্থান নেই... ইমনের কাছ থেকে এই কথা শোনার পর নিতার স্বাভাবিকভাবেই মনের ভেতর প্রশ্ন জেগে উঠলো...বন্ধুত্ব তাহলে কী ?
ইমনের সাথে খুব অদ্ভুতভাবে নিতার যোগাযোগটা ছিল...
কিন্তু দিনের পর দিন ডিপ্রেসড নিতা নিজেও বুঝতে পারেনি সে ভেতরে ভেতরে কতোটা ক্ষয়ে যাচ্ছে !
বেশ কিছুদিন ধরে নিতার ঊরু থেকে একপায়ের পেছনের দিকে ব্যাথা। থামার কোন লক্ষণ নেই...
অবশেষে যখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হল বেশ কিছুক্ষণ ডাক্তার কথা বললেন, কিছু টেস্ট দিলেন, কাউন্সেলিং করলেন এবং অন্যান্য ঔষুধের সাথে Perikolও দিলেন ।
নিতা জানে পারকিনসন রোগ ৫০/৬০ বছর বয়সে সাধারণত হয়...তবে তাকে এই ঔষুধ কেন ? ৫০/৬০ এ পৌঁছুতেতো নিতার এখনও ঢের দেরী !
নিতার সাথে আজই কথা হলো...ওকে ফ্যাকাসে দেখাচ্ছিল ! অদ্ভুতরকমের শান্ত মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই মনের ভেতরে কী ঝড়ের তাণ্ডব চলছে !
জীবনে কিছু মানুষ আসে... হৃদয় মন্দিরে যারা এতোটাই আপন হয়ে উঠে যে হাজার বছর ধরে দূর, বহুদূরে বাস করলেও, চোখের আড়াল হলেও যাদের অবস্থান নষ্ট হয়ে যায় না । সেই জায়গাও কেউ দখল করে নিতে পারে না শত চেষ্টাতেও...!
নিতার খোঁজ নিতে ওদের বাসায় গিয়েছিলাম। কম্বল জড়িয়ে কুণ্ডলি করে শুয়ে আছে।
সারাদিন কিছু খেতে পারে নি। খেলেই বমি হচ্ছে । এতো শক্ত ধাঁচের মেয়ে কতোদিন আমাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দিয়েছে অথচ আজ নিজেই চোখের সামনে ক্ষয়ে যাচ্ছে।
জিজ্ঞেস করেছিলাম পাগলামি করছে কেন?
বললো, মরে গেলে যেন ক্ষমা করে দেই ।
এমন নিষ্ঠুর কৌতুক শোনার আশা করিনি ।
রাগ করে উঠে আসতে নিলাম। ও দূর্বল হাতে আমার হাতটি ধরে বললো, "নাসরিন, এতো জীবন থেকে নেয়া ! আর জীবন বড্ড নিষ্ঠুরই !"
ও চেষ্টা করেও নিজেকে ইমন- এর ভাবনা থেকে বের করতে পারছে না।
আসলে ইমনের ভাবনা থেকে ও নিজেই বেরিয়ে আসতে চাইছে না।
বড় ধরণের মানসিক বিপর্যয়ে মানুষের নানান রকমের শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয় । বুঝতে পারছি ও শারীরিক যন্ত্রণা থেকে নিজের মুক্তির পথ বেছে নিয়েছে।
কিছু জরুরী শপিং করতে গিয়ে নিতার জন্যে একটা টুকটুকে লাল লিপস্টিক কিনলাম।
ওর সাজগোজের খুব অল্প যে কয়টা জিনিস আছে তার মধ্যে লাল লিপস্টিক অন্যতম।
যে মেয়েকে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ঠোটে হালকা লিপস্টিকও লাগাতে দেখিনি তাকে কিছুদিন আগ পর্যন্তও দেখেছি লাল লিপস্টিকে ঠোট রাঙিয়ে রাখতে ।
হাত ভরে লাল রেশমী চুড়ি পরে ঘুড়ে বেড়াতে।
কারণ আর কিছুই নয়...ইমন !
লাল লিপস্টিক, লাল চুড়ি ইমনের খুব পছন্দের বলে এখন সেসবও ওর পছন্দের তালিকায় চলে এসেছে।
নিতার ধারণা ওর জীবনটাকে ইমনই রঙিন করে দিয়েছিল !
ছোটবেলা থেকে বাবা নেই...ভাইয়ের শাসনে বেড়ে উঠা নিতার ইমনই পরম ভরসার জায়গা, যাকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করা যায়।
এতো ভালোবাসতে কেউ পারে তা ইমন ওর জীবনে না এলে নাকি ও জানতেই পারতো না !
যেহেতু চেয়ারে একটানা বসে থাকতে পারে না তাই বিছানায় শুয়ে শুয়ে মোবাইলে পড়া তৈরী করছিল ।
লিপস্টিকটা যখন ওর হাতে দিলাম ও ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো । কয়দিন ধরে কিছু খেতে না পারায় চেহারাটা প্রচণ্ড ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ঠোটগুলো চৈত্রের ফাটা মাটির মতো হয়ে গেছে...
ওর সামনে বেশিক্ষণ থাকতেও অস্বস্তি হয়...
নিতার পারকিনসন হয়নি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিতার হাঁটা দেখেই বলে দিলেন। সেই সাথে Perikol ও খেতে নিষেধ করে দিলেন।
এবার শুরু হলো চিকিৎসার আরেক ধাপ !
আনিতা চৌধুরী, একটি কলেজের জাদরেল প্রিন্সিপ্যাল। স্টুডেন্টদের কাউন্সেলিংটা নিজেই করেন।
অথচ এখন নিজেকেই হারিয়ে খুঁজছেন !
Facebook comments for blogger brought to you by AllBlogTools.com
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন