বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০১৩

অনুগল্প : "শোধ"- শুরুর পরে/শেষের আগে

ICMAB এর সামনে দিয়ে যখন আসছিল তখন বেশ বাতাস বইছিল। নীলক্ষেত থেকে কাটাবনের দিকে যেতে আইসিএমএবির গেটের উত্তর পাশের বসা লোকটার দৃষ্টি খেয়াল করে মুক্তা দেখলো তার কামিজের কাপড়টা একটু উড়ে গিয়ে উপরে উঠে গেছে। আর হাটুর অল্প উপরে উঠে যাওয়া সালোয়ার-এর উপর দিয়ে সেই লোক কি দেখার চেষ্টা করছে তা সেই জানে !
এক বৃষ্টির সন্ধ্যায় আইইআর এর ক্লাস শেষ করে মহসীন হলের মাঠের পাশ দিয়ে ছাতা মাথায় অন্ধকারে ফেরার পথে সবেগে চলা এক খালি রিক্সার চালক দ্রুততার সাথে ওর গায়ে হাত মেরেছিল ও কষ্ট পাওয়ার চেয়ে অবাক হয়েছিল !
পোশাকের শালীলতায় ওর শত্রুরাও ওকে কোন বাজে কথা শোনানোর কথা ভাবে না। তাহলে এই রিক্সাওয়ালার অন্ধকারে পোশাকে আবৃত এক নারীকে দেখেই তার আদিম প্রবৃত্তি জেগে উঠল ?!
"তবে যে ধর্ষনের কারণ হিসেবে মেয়েরা নাকি প্রভোকিং ক্যারেক্টার হিসেবে কাজ করে ?! কিভাবে সেটা?!"
মুক্তা আমায় জিজ্ঞেস করেছিল ।
আমি চুপসে যাওয়া মুখে কোন রকমে শুধু বলেছিলাম -"ওরা সব পশু রে, মুক্তা !"
অফিসের ড্রাইভার বলে ওকে বাদ দেবার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু মুক্তার রাসেলকে মাঝে মাঝে একদমই ভালো লাগে না !
প্রাইভেট কার বলে একটু আরাম করেই বসতে না পারলে কিসের প্রাইভেট কার ! তবেতো বাসই ভালো ...বিড়বিড় করে মুক্তা !
কখনো বসতে যেয়ে কামিজটা একটু হাটুর উপরে উঠে গেলেও রাসেলের হায়েনা মার্কা চোখ মিস করে না তা দেখতে ! কারের সামনে বা পাশে বা কাছাকাছি কোন নারীকে দেখলেতো মুক্তার রিতিমতো টেনশন লেগে যায় সেই নারীর দিকে তাকাতে তাকাতে রাসেল না আবার এক্সিডেন্ট করে বসে !
নাহ, রাসেল কখনোই এক্সিডেন্ট করে নি ! খুবই দক্ষতার সাথে এবং সুযোগ পেলে খুবই স্পীডে গাড়ি চালিয়েছে ।
রাসেলের কাছ থেকেই মুক্তার ভেতর এই রোগটা সম্ভবত সংকমিত হয়েছে...রাস্তায় কোন মেয়ে দেখলে মাথা থেকে পা পর্যন্ত মেয়েটির চোখে পড়ার আগেই দেখে নেয়া।
মুক্তা খুব মন খারাপ করে আমায় বলেছে..."জানিস, পনি, রাসেলের সুন্দরী বউতো বটেই একটা বাচ্চাও আছে !"
মাঝে মাঝেই রাসেল বেশ তাগাদা দিত, জোর করতো ..."ভাবী, স্যার তো সময় পাবে না, আপনি নিজে থেকেই ড্রাইভিংটা শিখে নেন । " আমি কয়েকদিন দেখিয়ে দিলেই পারবেন।
দৃষ্টির সমস্যা থাকলেও এমনিতে সব ব্যাপারে খুবই আন্তরিক রাসেলের কথায় মুক্তা সায়ও দিয়েছিল। সুমিতকে না জানিয়ে কখনো কখনো প্র্যাকটিস করেছেও রাসলের সহযোগিতা নিয়ে। নাহ, স্টিয়ারিং কট্রোলে রাসেল সচেতনভাবে হাত ছোঁয়ার চেষ্টা করে নি। কিন্তু মুক্তা যখন ড্রাইভিং সিটে বসা অবস্থায় থাকতো তখন রাসেলের দৃষ্টি ঘুরতো মুক্তার উপর ! বড্ড অস্বস্তি, বড্ড অসহ্য লাগতো সেই দৃষ্টি !
তাই আর ড্রাইভিংয়ের প্র্যাকটিসটা কন্টিনিউ করা হয় নি, আর সুমিতও পেরে আড়ালে মুক্তাকে নিষেধ করে দিয়েছিল। যদিও রাসেলের ব্যাপার সরাসরি কিছু বলে নি।
কখনো কোন লম্বা ট্রিপে গেলে ওদের সাথে ওর হোম এ্যাসিস্ট্যান্ট নাজুও থাকতো । বমি করতে যখন নাজু অস্থির হয়ে রাস্তার পাশে গাড়ি থেকে নামতো তখন মুক্তা নামার আগেই "ভাবী, আপনি বসেন" বলে রাসেল দৌড়াতো নাজুকে হেল্প করতে...ওদের সখ্যতা দেখে রাসেলের বৌ-এর মুখটা মুক্তার বড্ড মনে পড়ে যেতে বারবারই ...
বিভিন্নভাবে নাজুকে রাসেল-এর সাথে কথা বলা, মেশা থেকে দুরে রাখার চেষ্টায় মুক্তার কোন কমতি ছিল না। ....
কেমন যেন অলুক্ষুণে, কুডাক মুক্তার মনে বারবারই ডেকে যেতে চায় ! মুক্তা নিজেকেই ধমক দেয় ... নিজেকেই পাপী মনের মনে করে নিজেকে প্রবোধ দেয় ...
তারপরও মুক্তার মন থেকে খচখচানি কমে না .... !

2 মন্তব্য(গুলি):

নেট ব্যাবহার করেন কিন্তু ইন্টারনেট হতে কোনো আ্য় নেই? অন্তত ইন্টারনেট আর মোবাইল খরচটা নিজেই আয় করুন খুব সহজে http://affaritrack-administrator.blogspot.com

পরামর্শের জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites