রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫

অবদমিত অভিমান: পরের কথা


ইদানিং অনেক কথাই মনে আসে কিন্তু গুছিয়ে লিখতে পারছি না ।
সেই আগের মতো অবস্থা হয়েছে। চোখের সামনে, মনের ভেতর পুরো কাহিনী সিনেমা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমি গুছিয়ে লিখতে পারছি না !
আমি গুছিয়ে লিখতে পারছি না শাহানা এসেছিল। প্রতিরাতেই সে আসতো মায়ার কাছে। ওর নির্ঘুম রাতগুলিতে মায়ার বুকই ছিল ওর ঘুমের আশ্রয়স্থল। অষ্টাদশী এক অবুঝ কিশোরীর মতো মায়ার বুক খামচে ধরে অবলীলায় ও ঘুমিয়ে পড়তো ।
ভাবছেন ও মায়ার বুকে ঘুমিয়ে পড়তো আর মায়ার বাসার কেউই দেখতো না !
কী জানি ব্যাপারটা গোলমেলে আমার কাছেও।
মায়া কখনো আমায় বলেনি শাহানার কথা । কিন্তু শাহানার ডায়েরিটা আমি পেয়েছিলাম, সেখানে শাহানার সুখভরা স্বপ্নগুলোর কথা লেখা থাকতো । লেখা থাকতো ভালোবাসার সুখের সাগরে ওর ভেসে বেড়ানোর গল্প।
মায়া খুব পড়ুয়া ছিল। সবসময়ই কিছু না কিছু করতো । হয় পড়ছে তো পড়া শেষ করে টিভি দেখছে, নতুবা পিসিতে ম্যুভি দেখছে। অথবা গেমস খেলছে অথবা গল্পের বই পড়ছে নয়তো জিআরই-র পড়া পড়ছে। শাহানা ওর কোন কাজেই ব্যাঘাত ঘটায় নি। ও শুধু বিড়ালের মতো মায়ার সাথে ঘুরে বেড়াতো । রাত বাড়তে থাকলে শাহানা ঘুমে ঢুলতে থাকতো । মায়াই তখন ওকে বুকে নিয়ে "সফট কিটি ওয়ার্ম কিটি" গান শুনিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিত। ভাবছেন বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতো শুধু আর কিছু করতো না ? আর কিছু হতো না ওদের মাঝে ?
হতো তো ... মায়া গান গেয়ে কপালে চুমু দিয়ে দিত । আর বিড়ালের মতো আহলাদ করে শাহানা ঘুমিয়ে পড়তো ।
ওদের মনের ভেতর কী ছিল জানি না। তবে শাহানার ডায়েরিতে এর বেশি কিছু লেখা থাকতো না।
ডায়েরির পাতা উল্টাতে উল্টাতে এক জায়গায় লেখা ছিল (তারিখ দেয়া ছিল না) " আজ মায়ার আলাভোলা, নিষ্পাপ, মায়ায় জড়ানো হাতটা আমার হাতে নিলাম। হ্যাঁ, ভরসা দিতেই, আমি আছি তোমার পাশে..."
এই কথা পড়ার পর ওদের দু'জনের কোন নিষিদ্ধ সম্পর্কের কথা মনে আসে নি। যে হাত নিয়ে শাহানা নিষ্পাপ অনুভবের কথা বলেছে সেই হাতের মানুষটির সাথে ওর পাপহীন সম্পর্কটাই চোখের সামনে ভেসে উঠছিল ।
মাঝে মাঝে শাহানা চটুল দুষ্টুমিতে মেতে উঠতো, হয়তো মায়াকে বিব্রত করতেই। কিন্তু বিব্রত হতে থাকা মায়াই যে একসময় এই বিব্রতবোধ থেকে মুক্তি চাইবে, বা নিজে থেকেই মুক্তির পথ খুঁজে নেবে, কে জানতো ?
ডায়েরিতে পাতার পর পাতা শাহানার হাহাকারে ভরা ছিল। চোখের পানিতে অনেক লেখাই অস্পষ্ট হয়ে উঠেছিল ।
মায়া ওর রুমে যেতে শাহানাকে বারণ করেছিল । শাহানা ওর দরজার পাশে রাতের পর রাত দাড়িয়ে ঢুলতো আর ভোর হলে চলে আসতো। এভাবেই রাতের পর রাত চলতে থাকার কোন এক ভোরে চলে আসার আগে মায়াদের বাসার ডোর বেল বেজে উঠলো। ফিরে আসার মুখে শাহানা বেল শুনে চমকে উঠলো ।
এর পর শাহানার ডায়েরিতে আর এ বিষয়ে লেখা পাইনি।
শুধু পরের দিনে লেখা ছিল, "মায়া, এই জীবনে আমায় যে মানুষটি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা দিয়েছিলো সে তুমি। আমাকে এমন করে এর আগে আর কেউ ভালোবাসে নি। এমন সোহাগ করে কেউ বুকে জড়িয়ে গান গেয়ে, কপালে চুমু দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় নি। সেই আমি কেমন করে আর কাউকে তোমার ভাগ দেই বলো?"
মায়ার কাছে আমি জিজ্ঞেস করতে পারিনি কিছুই, কী ঘটেছিল সেই দিন।
কিন্তু ...শাহানা আত্মহত্যা করেছিল ২০শে ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে!
আমি খুব অবাক হয়েছিলাম! এমন একটা সুইডাইডাল কেস কোন দৈনিকের শিরোনাম হলো না কেন ?
কিন্তু আমার বিস্ময়ের বাকী ছিল !
শাহানা আত্মহত্যা করেছিল ২০০০ সালে! তখন দৈনিক সংবাদ পত্রে শাহানার লেখা চিঠিও ছাপা হয়েছিল।
তাহলে এতোদিন পরে ?!
মায়ার কাছে......... ...?

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সোশ্যাল নেটওয়ার্ক

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites