পূবালী বাতাসে, বাদাম দেইখা চাইয়া থাকি
আমার নি কেউ আসে...
বৈশাখ, ইদের আনন্দগুলো এখন আর নিপাকে স্পর্শ করে না।
মুখে একটা মেকি হাসি ঝুলিয়ে এই দিনগুলোর দায়িত্ব পালন করে ।
প্রিয় মানুষগুলো কাছেই থাকে...শাশুড়ি, স্বামী, সন্তান।
বৈশাখ, ইদে ননদরা বর বাচ্চা সহ বেড়াতে আসে। বাসায় বেশ আনন্দের ধুম পড়ে যায় ।
তারপরও নিপার ভেতরে রক্তক্ষরণ হয়। মেকি হাসির আড়ালে কষ্টেরা গুমড়ে মরে ।
কখনো জানালায় দাঁড়িয়ে বা কখনো বাথরুমের বেসিনে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে রক্তক্ষরণ কমানোর বৃথা চেষ্টা চলে।
নিপার মার ধারণা নিপার হৃদয় পাথরের তৈরি। কেননা নিপা কখনোই ওর মায়ের সামনে কাঁদেনি। সেই টিনবয়সেই যখন মাকে ছেড়ে বিশ্বদ্যিালয়ের হল জীবনে এলো তখন মাই কাঁদতো...নিপা বরং হেসে মাকে কাঁদতে নিষেধ করতো। নিজে কাঁদলে মা যে আরো কাঁদবে। স্বামী, পুত্র হারিয়ে নিপার মার যেনো নিপাই আনন্দের উৎস।
বিয়ের পর শাশুড়ির অনেক যন্ত্রণা সয়েও কখনো বরকে বলেনি আলাদা সংসার করতে বরং সবসময়ই চেষ্টা করেছে শাশুড়ির যেনো কখনো খাওয়া, পরায় অযত্ন না হয়।
বাবা বেঁচে থাকতে মায়ের জন্যে অন্যান্য উৎসবে তো বটেই বৈশাখের প্রথম দিনের জন্যেও নতুন শাড়ি কিনে দিতেন।
নিপা দুই মায়ের জন্যে দু'টো শাড়ি কিনেছে। বাসায় ফিরেই শাশুড়ি মাকে তাঁর শাড়িটা দিলেন ।
পরিকল্পনা ছিল ১৩ তারিখে মায়ের কাছে গিয়ে সেইদিনই আবার ফিরে আসবে নইলে বর, বাচ্চাদের আনন্দ যে ম্লান হয়ে যাবে ।
ফোন করলো মায়ের কাছে। কিন্তু গলার কাছে সব আটকে গেছে। কথা বেরুচ্ছেনা । মা ওপাশ থেকে তাগাদা দিচ্ছে..."কিরে কথা বলছিস না কেন?"
এতো বছরের পাথর হৃদয়ের নিপা এবার ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো...
-আম্মা, আমিতো আজকে আসতে চাইছিলাম
মা হেসে বলে, তবে আয় ।
-হরতাল যে !
আচ্ছা হরতালের পরে আসিস ।
-কিন্তু আমি যে আপনার জন্যে শাড়ি কিনছিলাম!
আররে আমার তো শাড়ি আছেই। তুই সময় সুযোগে পরেই আসিস ।
-এপাশ থেকে অঝোড়ে নিপা কাঁদছে, বাচ্চা ছেলেটা কাছে এসে নিপার চোখের পানি মুছে দিচ্ছে, সে জানে মা তার মায়ের জন্যে কাঁদছে।
[১৩ এপ্রিল ২০১৫]
Facebook comments for blogger brought to you by AllBlogTools.com
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন